জেড.এম. শামসুল :
মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একাদশ দিন আজ। এ দিনে ঢাকা চট্টগ্রাম সহ সারা দেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবী সোচ্চার হতে চলেছে। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষাকে পাশ কাটিয়ে উর্দ্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পিছনে কয়েকজন অবাঙালি রাজনীতিবিদের সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা বাঙালি জাতি বাস্তবায়ন করতে দেয়নি।
দেশ বিভাগের পর থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৯৪৯ সালের চলমান আন্দোলন অব্যাহতভাবে ১৯৫০ সালের ৪ জানুয়ারী উর্দ্দুর পরিবর্তে আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী তুলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ বছরের ৯ জানুয়ারী এই দিনে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের এক সভায় পূর্ববাংলা সরকারের শিক্ষা বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারী মিজানুর রহমান আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে বক্তব্য রাখলে সভায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। উর্দ্দুভাষা সমর্থনকারীদের উদ্যোগে ১৮ জানুয়ারী ১৯৫০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এক সভায় মিলিত হয়ে আইনসম্মত আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়। এ বছরের ১৬ ফেব্র“য়ারী শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ড কর্তৃক উর্দ্দু ভাষার সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্যে ডঃ আব্দুল হককে সভাপতি করে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। অপরদিকে ১৮ ফেব্র“য়ারী ১৯৫০ সালে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় আরবী হরফে লেখা বাংলা ভাষার মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষাদনের জন্যে ২০টি কেন্দ্র খোলা হয়। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’র সভায় আব্দুল মতিনকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির উদ্যোগে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হত। এই দিনের সভায় বক্তারা বলেন, শুধু রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসাবে পালন করলে কখনও রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং বাংলা রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি পাবে না। তার প্রতি জনসমর্থন সৃষ্টি করতে হবে। বাংলা রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম আন্দোলন জোরদার করতে হবে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা চুক্তির পর আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। ১১ মার্চের আলোচ্য চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করে নতুনভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস অব্যাহত থাকে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভাষা আন্দোলনে গণসচেতনতা সৃষ্টি হয়। ছাত্র জনতার মধ্যে ভাষা আন্দোলনের দৃঢ় প্রত্যয় জেগে উঠে। সভা সমাবেশ ও বাংলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’র কার্যক্রম এগুতে থাকে।