বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে লাভবান হবে দু’দেশই

19

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে উপকৃত হবে দুই দেশই। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় বাড়তে পারে ১৭ শতাংশ আর ভারতের বাড়বে অন্তত আট শতাংশ।
গত সপ্তাহে ‘কানেক্টিং টু থ্রাইভ: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপারচুনিটিস অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টেগ্রেশন ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালের মধ্যকার মোটরযান চুক্তি (এমভিএ) বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের সঙ্গে এর তুলনা এবং নিরবচ্ছিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষমতা ও দুর্বলতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
মোটরযান চুক্তি শক্তিশালী করতে দেশগুলো কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা এবং এর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের সুপারিশও করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যে ভারতের অবদান প্রায় ১০ শতাংশ আর ভারতের মোট বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবদান মাত্র এক শতাংশের মতো। অথচ পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের ভাগ প্রায় ৫০ শতাংশ এবং মোট বাণিজ্যে অবদান অন্তত ২২ শতাংশ। অবশ্য ভারতের কোনও প্রতিষ্ঠানের একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে যে খরচ হয়, সেই তুলনায় ব্রাজিল বা জার্মানির কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করলে খরচ হয় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অন্যতম বড় বাধা বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ব্যবস্থা। সাধারণভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গড় শুল্ক বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।
পূর্বেকার এক বিশ্লেষণে ধারণা করা হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি একলাফে ১৮২ শতাংশ বাড়তে পারে এবং বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রফতানি বাড়তে পারে ১২৬ শতাংশ।
বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও বহুগুণ বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি ২৯৭ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ভারতের রফতানি ১৭২ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ হলো ভারত, নেপাল, ভুটান ও পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর জন্য কৌশলগত প্রবেশদ্বার। আঞ্চলিক বাণিজ্য, ট্রানজিট ও লজিস্টিক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পাওয়ারহাউজও হয়ে উঠতে পারে।
তার মতে, গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য অনেকটা বেড়েছে ঠিকই, তারপরও এটি বর্তমান সম্ভাবনার চেয়ে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার কম।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমান্তকে আরও স্থূল করে দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পোস্ট বেনাপোল-পেট্রাপোল অতিক্রম করতে কয়েক দিন লেগে যায়। অথচ পূর্ব আফ্রিকাসহ বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলোতে একই পরিমাণ পণ্য পারাপারে সময় লাগে ছয় ঘণ্টারও কম।
ভারতে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জুনায়েদ আহমেদ বলেন, পূর্ব উপ-অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন মেরুতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই উন্নয়ন সম্ভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দেশগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা- রেল, অভ্যন্তরীণ নৌপথ এবং সড়কে বিনিয়োগ করা। বিশেষ করে, অঞ্চলটি অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে শুরু করায় তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থাই দীর্ঘমেয়াদী টেকসই এবং সর্বাত্মক প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় ট্রাক চলাচলের অনুমতি নেই। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেশটির বাকি অংশ থেকে একপ্রকারে বিচ্ছিন্নই বলা যায়। ভারতীয় যানবাহনগুলোর ওই অঞ্চলে যাওয়ার একমাত্র পথ ‘‘চিকেন’স নেক’’ বলে পরিচিত শিলিগুঁড়ি করিডোর। এর জন্য অনেক দীর্ঘ এবং ব্যয়সাপেক্ষ পথ পাড়ি দিতে হয় তাদের।