কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণার দিনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা, ককটেল, পেট্রোল বোমার মজুদ করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের দাবি। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের সহায়তায় নাশকতা ও নৈরাজ্য চালানোর জন্য মজুদ করছে বিএনপির উগ্রপন্থী ক্যাডাররা, যারা অতীতে পেট্রোল বোমা ও আগুন সন্ত্রাসের আসামি। সম্ভাব্য নাশকতা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কায় রাজধানী ঢাকাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নজরদারি করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে রায়কে ঘিরে নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা, পেট্রোল বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি মজুদ করার খবর পেয়ে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার রাতে রাজধানীর কাফরুল এলাকার ইব্রাহিমপুরের স্বাধীনতা চত্বর এলাকা থেকে ৯০টি পেট্রোল বোমাসহ ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধারসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে তরিকুল (৪০), নিয়ম কুমার (৩৮) ও মহিদুল (৩৬)। কাফরুল থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে সামনে রেখে তারা পেট্রোল বোমার মজুদ করে। তাদের সঙ্গে অন্য যারা সহযোগী আছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ। আদালতে পাঠিয়ে গ্রেফতারকৃত তিন জনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সম্ভাব্য সব ধরনের সহিংসতা ও নাশকতা মোকাবেলায় হার্ডলাইনে বেছে নিয়েছে সরকার। কোনভাবেই নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী দেশে পরিণত হতে দেবে না সরকার। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন দলের যেকোন আন্দোলন বা নাশকতার চেষ্টা কঠোরভাকেই মোকাবেলা করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই ধরনের কঠোর বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মানুষজনের জানমাল রক্ষার্থে কোন ছাড় নয়, বরং ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থানে থেকে বিএনপি পক্ষের আন্দোলনের নামে নাশকতা দমনের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরকার ও দলের হাইকমান্ড থেকে। একই সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের সব মেট্রোপলিটন ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকেও গ্রীন সিগন্যাল পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট অধ্যুষিত জেলা-উপজেলাগুলোকে কঠোর নজরদারির মধ্যে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। অতীতে ঢাকা অচল করে দিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার হুমকি, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে আল-কায়েদা, জেএমবিসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীর অপতৎপরতা এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের বিভিন্ন গোপন বৈঠকের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে নেয়া হয়েছে। বেশকিছু গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও এখন সরকারের হাতে। বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে নাশকতা-সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করবে। দেশী-বিদেশী মহলের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্রের কথাও উঠে এসেছে ওই গোয়েন্দা রিপোর্টে। বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে যে কোন ধরনের নাশকতা ও সহিংসতার আশঙ্কার বিষয়টিই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাস করা হলে কঠোর জবাব দেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, খালেদা জিয়ার ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে সামনে রেখে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের গোপন ষড়যন্ত্রের একটি তথ্য সরকারের হাইকমান্ডের হাতে এসেছে। আর এ চক্রান্ত্রের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও উগ্র সাম্প্রদায়িক বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও জড়িত রয়েছে। আর ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই বিরোধীপক্ষের সম্ভাব্য নাশকতা ও সহিংসতা মোকাবেলায় দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান, কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। রায়কে ঘিরে কোন ধরনের সহিংসতা বা নাশকতার সঙ্গে কেউ জড়িত হলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের বছর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি ও তৃনমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন দলটির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, বড় জোর জেল হবে-এই কথার মধ্য দিয়ে বিএনপি ও তার মিত্র দল ও গোষ্ঠীকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অবশ্য দলটির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করবে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অতীতে ২০১৩ সাল থেকে সরকার বিরোধী যেসব আন্দোলন করেছে তাতে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। মাত্র পাঁচ দিন আগে গত ৩০ জানুয়ারি বিএনপির ক্যাডার ও সন্ত্রাসীরা হাইকোর্টের সামনে প্রিজনভ্যানে ভাংচুর করে প্রিজনভ্যানে রাখা বিএনপির কর্মী পরিচিত আসামিদের ছিনিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশকে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে তাদের রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তায় ভাংচুর করার মতো দুঃসাহস দেখানোর মধ্য দিয়ে তারা মাঠের শক্তি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছে। রায় ঘোষণার দিন যে তারা নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে-এমন আশঙ্কার পরিস্থিতি তৈরি করেছে বিএনপির কর্মী-ক্যাডারাই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের বছরে বেগম খালেদা জিয়ার রায়ে শাস্তি হলে দলটির নেতাকর্মীরা নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে মরণ কামড় দিতে পারে। কারণ দলটির জন্য নির্বাচনী পরীক্ষা ও অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে। খালেদা জিয়ার রায়টা নিয়ে মোটামুটি বিএনপির নেতাকর্মীরাও অবগত। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের আন্দোলনের প্রক্রিয়া তৃণমূলের নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মারমুখী হতে পারে। এ কারণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের সরকার, আদালত, আওয়ামী লীগ তথা চৌদ্দ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি তৈরি করার জন্য অতীতের মতোই আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে পারে এমন আভাস দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে বিএনপি। আর জামায়াত-শিবির বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট রায় ঘোষণা ঘিরে বড় ধরনের শোডাউন করার চেষ্টা করবে তা মোটামুটি নিশ্চিত গোয়েন্দা সংস্থা। এ জন্য রাজধানীসহ সারাদেশের নেতা-কর্মীদের রাজধানীতে জমায়েত করার আড়ালে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী গোষ্ঠীর মাধ্যমে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক ও নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
প্রসঙ্গত বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-০৬ মেয়াদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলার প্রধান আসামি। সেনা সমর্থিত ফকরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।