১৬ কোটি মানুষের খাদ্য জোগাতে গিয়ে বেশির ভাগ জমিতে তিন ফসল, এমনকি চার ফসলও করা হয়। একই ফসল বারবার করা হচ্ছে। কোনো বিরতি না দিয়েই জমিতে একের পর এক ফসল করায় মাটির পুষ্টিগুণ যে একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে আমরা নজরই দিচ্ছি না। ফলে দিন দিনই রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে সার ব্যবহৃত হয়েছিল ৩৬ লাখ ৮২ হাজার টন, সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যবহৃত হয়েছে ৪৮ লাখ টন। সার ব্যবহারের ধরনও বদলাচ্ছে। আগে সাধারণত দুই ধরনের সার ব্যবহৃত হতো, এখন ব্যবহৃত হয় আট ধরনের সার। এর একটা বড় অংশই আমদানি করতে হয়। এতে একদিকে ফসল উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে রাসায়নিক সারের অসম ব্যবহারেও মাটির পুষ্টিগুণ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মোট আবাদি জমির ৬১ দশমিক ৬ শতাংশেই জৈবপদার্থের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় কৃষিবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আবাদি জমির পুষ্টিগুণ রক্ষায় মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার ওপর দ্রুত নজর দিতে হবে।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ফসল ফলাতে কৃষকরা রাসায়নিক সার ব্যবহারের কথা চিন্তাও করত না। জৈব সারই ছিল তাদের প্রধান ভরসা। আর এখন জৈব সারের ব্যবহার নেই বললেই চলে। তখন একবার ফসল ফলানোর পর জমিগুলো কিছুটা সময় পতিত রাখা হতো। নানা রকম ডাল, সরিষা, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদির চাষ করা হতো। এখন সেসবের জায়গা দখল করেছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ, যা মাটি থেকে অতিমাত্রায় পুষ্টি শোষণ করে। ফলে ক্রমেই বেশি করে সার ব্যবহারের প্রয়োজন বাড়ছে। আবার বিরতি না পাওয়ায় মাটি নিজে থেকেও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মাটির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা এতটাই কমে যাবে যে তখন মাটির নিজস্ব উর্বরতা বা উৎপাদন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যাবে এবং তা পুরোপুরি সারনির্ভর হয়ে পড়বে। সে অবস্থায় কৃষিতে যে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে, তা কি আমরা মোকাবেলা করতে পারব?
কৃষকরা এখন অনুমানের ওপর জমিতে সার দেয়। যে জমিতে ১০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োজন সেখানে ২০ কেজি বা তারও বেশি ব্যবহার করে। মাটি পরীক্ষা করে চাহিদা অনুযায়ী সার দেওয়া গেলে সারের প্রয়োজন যেমন কম হতো, তেমনি মাটিও কম ক্ষতিগ্রস্ত হতো। কিন্তু মাটি পরীক্ষা করার সুযোগ তাদের নেই। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পারছে না। আমরা আশা করি, সরকার জরুরি ভিত্তিতে বিষয়গুলো বিবেচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।