চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মাসহ অনেক জটিল রোগের ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন হচ্ছে। সিটি স্ক্যান, এমআরআইয়ের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে। অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। কিন্তু এর মধ্যেই এক শ্রেণির মানুষ চিকিৎসার নামে সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। চিকিৎসার নামে এখনো চলছে অপচিকিৎসা। অনেক ভন্ড পীরবাবা সেজে সর্বরোগের চিকিৎসা করছেন। দিচ্ছেন তেল পড়া, পানি পড়া। এখানে থেমে থাকলে তবু কথা ছিল। তাদের হাতে থাকে দেড় হাত লম্বা একটি কঞ্চি। এই কঞ্চি দিয়ে অসুস্থদের প্রহারও করা হয়ে থাকে। জিন-ভূত তাড়ানো থেকে শুরু করে তোতলানো বন্ধ করার চিকিৎসা করে থাকেন। কিডনি রোগ থেকে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, প্যারালিসিস, চোখে কম দেখা, জন্ডিস এমন অনেক রোগই নাকি ভালো হয়ে যাচ্ছে। এদের কঞ্চির ঘা খেতে তাঁর বাড়ির সামনে লম্বা লাইন পড়ে। অথচ তাদের নিজের চিকিৎসা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে পানি পড়া, তেল পড়া, ঝাড়ফুঁক কিংবা কঞ্চির ঘা কার্যকর নয়। তাদের প্রতারণা এখানেই স্পষ্ট। মানুষের ‘স্বপ্নে পাওয়া বিদ্যা’ তাদেরর নিজের জন্য প্রযোজ্য নয়।
আমাদের দেশে এখনো মানুষ কিছু বিশ্বাসের পেছনে ছোটে। দেশের সাক্ষরতার হার বেড়েছে। সরকার চিকিৎসাব্যবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যেতে চায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলছে উন্নতমানের আধুনিক চিকিৎসা। তার পরও মানুষ কেন অপচিকিৎসার পেছনে ছুটবে। সেখানে অর্থ ও সময় ব্যয় করবে? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মানুষের অসচেতনতা। শিক্ষার প্রসার ও চিকিৎসাসেবা গ্রামাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। স্বপ্নে ওষুধ পাওয়া গেলে এবং সর্বরোগে সেই ওষুধের ব্যবহার সম্ভব হলে তো আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা শাখায় এত গবেষণার প্রয়োজন ছিল না। অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধেরও প্রয়োজন পড়ত না। সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে নজরুলের মতো কোনো প্রতারক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারবে না। একই সঙ্গে এসব ভণ্ড ও প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে হবে। চিকিৎসার নামে যারা এসব করে বেড়াচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা দরকার।