হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত দীননাথ ইনস্টিটিউশন মডেল হাই স্কুলে ভর্তিকৃতরা ক্লাস নিচ্ছে আর ভর্তি বঞ্চিতরা বাইরে শহীদ মিনারে ধর্মঘট করছে। অপরদিকে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রস্তুতি নিচ্ছে সভায় বসার। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ সংকটের কোন সমাধন হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রণয় চন্দ্র দেব ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রেজ্জাকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। আন্দোলনরত ছাত্র ও অভিভাবকরা বলছেন, মনগড়া মতে ভর্তি পরীক্ষার নামে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঢেলে দিয়েছে অবিবেচক কর্তৃপক্ষ। উপজেলা সদরের আশপাশে ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় আর কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তারা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। এ অবস্থায় ভর্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা না হলে প্রয়োজনে তারা বিদ্যালয় ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেবার হুমকিও দিচ্ছেন। গত ৭ জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছুকদের জন্য ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৬১৫ শিক্ষার্থী ফরম সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫২১ জন। এর মধ্যে ৩৭৬ জনকে কৃতকার্য ঘোষণা করা হয়। অবশিষ্ট ১৪৫ জন অকৃতকার্য হয়। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি আরো শতাধিক শিক্ষার্থী। ধর্মঘটরত ভর্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে পরীক্ষার নামে কঠিন প্রশ্নপত্র দিয়ে বেকায়দায় ফেলা হয়েছে। আমি গরীব ঘরের সন্তান, অভাব-অনটনের মাঝে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। অভাবী সংসারে জন্ম নিয়ে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছি না। মাঝে-মাঝে দিনমজুর পিতাকে কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে লেখাপড়ায় মনযোগিও হতে পারিনি। আমার ইচ্ছা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ভাল করে লেখাপড়া করে আমার পরিবারে হাসি ফোটাব। শিক্ষার্থী শামছুন্নার ইভার দাবী সে ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে সকল প্রশ্নের উত্তর ভাল করে লিখেছে। সে অকৃতকার্য হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু বিদ্যালয়ের ফলাফল তালিকায় তার নাম নেই। এ কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিও করছে না। তার ধারণা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ভর্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থীর অভিভাবক উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়কে সরকারি করণের দোহাই দিয়ে কঠিন ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা যে বিদ্যালয়কে সরকারি করণের জন্য তাজা রক্ত দান করেছি, সেই স্কুলেই যদি আমাদের বাচ্চা-কাচ্ছারা ভর্তি হতে না পারে তাহলে এই বিদ্যালয়ের দরকার কি? সুতিন গ্রামের অভিভাবক রাহেনা আক্তার বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমরা আমাদের সন্তানদের প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করার সামর্থ নেই। যেখানে ভাল করে সংসারের সকলকে নিয়ে তিন বেলা খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারছি না। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট স্কুলে লেখা-পড়া করাব কিভাবে? আমাদের বাচ্চা-কাচ্ছাদের এই স্কুলেই ভর্তি করতে হবে। নইলে আমরা বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ত্যাগ করব না। রামপুর বা বাগানের চা-শ্রমিক মানু চাষা বলেন, আমার ভাতিজা বিপ্লব চাষা মৌড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সনের পিইসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্য। এখন স্কুলে ভর্তি করতে এসে দেখি এখানে নাকি আবার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়। সরকার যেখানে চা শ্রমিকদেরকে বিদ্যালয়মুখী করতে নানা ধরণের সেবা প্রদান করছে। সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষার নামে চা-শ্রমিক সন্তানদের লেখা-পড়ার আলো নিভিয়ে দিচ্ছে।