সরকারের শেষ বছরে এসে বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। চলতি বছরের শেষে অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তার আগেই মোটামুটিভাবে সম্পন্ন হতে পারে সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিতব্য পদ্মা সেতুর কাজ। অবশ্য রেলসেবা চালু হতে কিছুটা দেরি হতে পারে। বিশ্বব্যাংক মাঝখানে দুটি বছর নষ্ট না করলে এই সেতুর কাজ আরো আগেই শেষ হতে পারত। পটুয়াখালীর পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানে দেশের ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ হাব নির্মাণের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পায়রায় মোট ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে চীনা অর্থায়নে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ৩১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এর প্রথম ইউনিটটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে উৎপাদনে আসতে পারে। রাজধানীর উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেলের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। জাপানি অর্থায়নে নির্মিতব্য মেট্রো রেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ ২০১৯ সালেই চালু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপানি অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ হাব তৈরি হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে। আগামী ২৫ জানুয়ারি এটির মূল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এখানে একটি গভীর সমুদ্রবন্দরও নির্মিত হবে। গত ৩০ নভেম্বর দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পারমাণবিক চুল্লির নির্মাণকাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাশিয়া ঋণ দিচ্ছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটি মহাসড়ক চার লেন করার কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেন করার কাজ ৫১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক চার লেন করার কাজও এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার চালু হয়েছে। বিমানবন্দর সড়ক থেকে আশুলিয়া ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলেছে।
১০টি মেগা প্রকল্পসহ হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের পশ্চাৎপদতা অনেকটাই ঘুচে যাবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা পূরণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসবে। আর তার ফল হবে সুদূরপ্রসারী। শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। একসময় দেশে দেশে রোড শো করেও বাংলাদেশ বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ বা এফডিআই টানতে পারেনি। গত কয়েক বছরে এফডিআই বেড়েছে কয়েক গুণ। অদূর ভবিষ্যতে তার রীতিমতো উল্লম্ফন ঘটবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর ও পায়রা বিদ্যুৎ হাবকে কেন্দ্র করে গোটা দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হবে। অবহেলিত দক্ষিণবঙ্গ উন্নয়নের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে। একই সঙ্গে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টির চলমান প্রক্রিয়া সারা দেশের উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করবে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যে গতি এসেছে, তা অব্যাহত থাকলে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া কোনো অবাস্তব স্বপ্ন নয়। আমরা চাই, উন্নয়নের এই গতি অব্যাহত থাকুক।