তথ্য ও প্রযুক্তির প্রসার জরুরী

41

প্রযুক্তি, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ দশক আগেও টেলিফোনে কথা বলার জন্য বুকিং দিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হতো।
কখন লাইন পাওয়া যাবে, সেটিও ছিল অনিশ্চিত। আর এখন মোবাইল ফোনে শুধু বাংলাদেশে নয়, দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তে যেকোনো সময় কথা বলা যাচ্ছে। যার সঙ্গে কথা হচ্ছে, তাকে দেখাও যাচ্ছে। আশির দশকেও যেখানে একটি পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসিতে তথ্য ধারণের ক্ষমতা ছিল কয়েক মেগাবাইট, এখন সেখানে ছোট ছোট ল্যাপটপেও তথ্য ধারণক্ষমতার হিসাব গিগাবাইট ছাড়িয়ে টেরাবাইটে চলে যাচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী আমেরিকায় বসেও বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন। দুনিয়ার যেকোনো বিষয়ে হাতের কাছে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা কয়েক দশক আগেও ছিল কল্পনার অতীত। প্রযুক্তির এই অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যারা এগোতে না পারবে, তারা ক্রমেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। আমাদের সৌভাগ্য, গত সাত-আট বছরে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের প্রায় প্রতিটি পর্যায়েই আজ অটোমেশনের ছোঁয়া লেগেছে।
তাতে কাজের গতি যেমন বেড়েছে, তেমনি দুর্নীতি-অনিয়ম ক্রমেই কমে আসছে। এসবের জন্য দ্রুত জনবল গড়ে উঠছে। নতুন নতুন টেক পার্ক গড়ে উঠছে। আর সেসবের ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যেও। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, এক দশক আগেও যা ভাবা যেত না। আউটসোর্সিংয়ের আয় ২০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা যে খুব দ্রুতই অর্জিত হবে, তা এখন এ ক্ষেত্রে ওয়াকিফহাল প্রায় সবাই স্বীকার করছেন। এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল সম্মেলন ২০১৭। গত বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক সফল দৃষ্টান্ত সোফিয়া নামের কন্যা রোবট। রোবট সোফিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এবং পরে অতিথিদের উদ্দেশে যে আলাপচারিতা করে, তা যেন কল্পনাকেও হার মানায়। সোফিয়াকে একনজর দেখার জন্য সেখানে প্রচণ্ড ভিড় জমে যায়। সোফিয়ার উদ্ভাবক ড. ডেভিড হ্যানসন প্রযুক্তির প্রতি বাংলাদেশিদের এমন আগ্রহ দেখে অভিভূত হয়েছেন। ভবিষ্যতে সোফিয়ার নির্মাতা হ্যানসন রোবটিক্সের পক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারেও তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের জন্য এটি অবশ্যই একটি সুখবর। আর তা সম্ভব হয়েছে গত সাত-আট বছরে বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির একটি ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে বলেই।
তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে অগ্রগতির যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা আরো এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা আরো বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যে সাবমেরিন কেবল ডাবল হয়েছে। মার্চের মধ্যে নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ উক্ষেপণের কথা রয়েছে। নেটওয়ার্কিং আরো উন্নত করতে হবে। ইন্টারনেটের ব্যয় কমাতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের তরুণরা অবশ্যই মেধাবী, তারা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবেই।