কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে তাদের সঙ্গে আলোচনা বা বিশেষ কোনো উদ্যোগের সম্ভাবনা নাকচ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিএনপি এবার ‘নাকে খত দিয়ে’ নির্বাচনে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
তিন দিনের কম্বোডিয়া সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য অনেক প্রশ্নের মধ্যে গুরুত্ব পায় আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার কিছু করবে কি না। এর জবাবে স্পষ্টতই কোনা উদ্যোগ না নেয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এই দাবি পূরণ না হলে আগামীতেও ভোটে না আসার কথা বলছে দলটি। কিন্তু গত বছর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাহলে বিএনপিকে ভোটে আনতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, এমন প্রশ্নে সরাসরি না করে দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন চলাচালেই হাসতে হাসতে বলেন, ‘তাদেরকে (বিএনপি) কি বরণ ডালা পাঠাতে হবে? মনে হচ্ছে বরণ ডালা পাঠাতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি। কোন পার্টি ইলেকশন করবে, কোন পার্টি করবে না, এটা সম্পূর্ণ তার পার্টির সিদ্ধান্ত। তারা যদি নির্বাচনে আসতে চায়, এটা তাদের সিদ্ধান্ত, আর যদি করতে না চায়, এটাও তাদের পার্টির সিদ্ধান্ত। কাজেই এখানে আমাদের তো কোনো কিছু বলার দরকার নাই।’
‘তারা যদি নির্বাচন করতে চায়, চলে আসবে। যদি করতে না চায় তাহলে করবে না। কাজেই এত সাধাসাধির দরকারটা কী এখানে?’
২০১৪ সালের মতো ‘ভুল’ বিএনপি এবার করবে না বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্র। বলেন, ‘গতবার যা করেছে, এবার তা করবে না, এবার নাকে খত দিয়ে আসবে, সেটাই বলে দিলাম।’
‘জ্বালাও পোড়াও করলে বরদাশত করা হবে না’
নির্বাচন বর্জন করে আবারও আন্দোলনে গেলে পরিণতি ভালো হবে না বলেও জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে খাওয়া, মানি লন্ডারিং করে সৌদিকে এত সম্পদ, এগুলোরও বিচার হবে। এই বিচার থেকে বাঁচার জন্য যদি এবারও যদি জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুর শুরু করে, এবার কিন্তু জনগণ ছাড়বে না। এবার জনগণই প্রতিরোধ করবে। জনগণকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা, এটা কেউ বরদাশত করবে না।’
আগাম নির্বাচন হবে না : সরকার আগাম নির্বাচনের বিষয়ে কিছু ভাবছে কি না, এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রে যে কোনো সময় ইলেকশন হতে পারে, এমন কোনো দৈন্যদশায় পরিনি যে ইলেকশন দিতে হবে।’
‘যারা ভদ্রতা জানে না, তাদের সাথে আলোচনা নয়’ : আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জনিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তিনি ২০১৩ সালে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করার বিষয়টি এবং ২০১৫ সালে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে তার গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কার সঙ্গে আলোচনা? আবার প্রশ্নটা করেন, কার সঙ্গে?’
‘হ্যাঁ, প্রস্তাব দিয়েছিলাম, ফোন করেছিলাম, তারপর যে ঝাড়িটা খেলাম, আমার ও রকম অপমানিত হওয়ার আর ইচ্ছা নাই।’
‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, যাদের মধ্যে ভদ্রতা জ্ঞান নাই, তাদের সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
কোকোর মৃত্যুর পর বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ঢুকতে না পারার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আর যাই হই, আমি তো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমার অফিস ফোন করেছে, যোগাযোগ করেছে, সময় ঠিক করেছে আমি গেছি, দরজার কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, তালা দিয়ে দিয়েছে আমাকে ঢুকতে দেয়নি।’
‘আমি গাড়ি থেকে নেমে, দেখলাম মেইন গেট খোলা যাবে না, তালা দেয়া। আমি বললাম, ঠিক আছে, যেহেতু ছেলে হারা মা, একটু শান্তনা দেব, আমি ছোট গেট দিয়ে ঢুকব, কিন্তু যেতে পারিনি, কারণ সেটাতেও তালা দেয়া। ভেতরে বিএনপির সমস্ত নেতারা, বড় বড় নেতারাও ওখানে দাঁড়ানো। অথচ তারা আমাকে ঢুকতে দেয়নি।’
‘এই ধরনের ছোটলোকিপানা যারা করে, তাদের সঙ্গে কথা বলার কথা বলেন কোন মুখে?…আমি জাতির পিতার মেয়ে বলেই গিয়েছিলাম, নইলে যাওয়ার কথা না।’
বারবার আলোচনার নিয়ে প্রশ্ন করে সাংবাদিকরা জুলুম করছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে যতটা সহনশীল হতে হয়, চেষ্টা করেছি। তারপরও যখন এত অপমান, তখন কোন মুখে আপনারা বলেন? এক বাসায় গেলে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলে আপনারা যাবেন? কয়জন যাবেন? আমার ওপর কেন এত জুলুম করেন আপনারা।’
‘সংসদে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি থাকুক’
‘ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই’ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি চান, সংসদে যেন স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি থাকুক।
‘জনগণের কল্যাণে যারা কাজ করে, যারা স্বাধীনতা ধারক-বাহক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা দেশকে গড়ে তুলতে চায়, তারাই ক্ষমতায় আসুক, তারাই পার্লামেন্টে আসুক।’
‘এখানে কোনো যুদ্ধাপরাধী, কোনো খুনি, তাদের যেন জায়গা না হয়, তাহলে দেশটা আবার ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।
‘যারাউন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে পারবে, যারা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যাবে, যারা দেশকে আবার পেছন দিকে টাকবে না, যারা সত্যিকার দেশর কল্যাণ চায়, তারাই নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করুক, তারাই পার্লামেন্টে আসুক। পার্লামেন্টে আর নোংরা কথা, খিস্তি খেউর যেন না শুনতে হয়।
বর্তমান সংসদের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত চারটা বছর পার্লামেন্টে কোনো অসভ্যতা নাই। নোংরামি নাই, আজেবাজে কথাবার্তা নাই, যে সমস্ত কথাবার্তা শুনলে কানে হাত দিয়ে থাকতে হয়, এ সমস্ত কথাবার্তা আমরা শুনি নাই। একটা ভদ্র পরিবেশ, একটা গণতান্ত্রিক পরিবশে থাকুক, সেটাই আমরা চাই।’