স্টাফ রিপোর্টার :
বিয়ানীবাজারের রাতের বেলায় ঘরে ঢুকে কিশোরী দুই বোনকে বেঁধে গণধর্ষণ মামলার রায়ে ৫ ধর্ষণকারীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। গতকাল রবিবার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক এ. এম. জুলফিকার হায়াত এ রায় প্রদান করেন।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার পূর্ব পইলগ্রাম প্রকাশ জালালপুরের মৃত মখদ্দস আলীর পুত্র জয়নুল আহমদ (৪০), একই গ্রামের কালাম আহমদ উরফে কামাল (২৬), সোনাই মিয়ার পুত্র আবদুল বাসিত (৩৬), একই থানার বরইআইল গ্রামের মো: আব্দুল মকিতের পুত্র হাসনু মিয়া (৩৭), ও কানাইঘাটের বড়দেশ গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর পুত্র সেলিম উদ্দিন (২৫)। এ ৫ জনের মধ্যে আ: বাসিত বর্তমানে পলাতক রয়েছে। বাকিরা কারাবন্দী। এ মামলায় জয়নুলের ছোট ভাই ফখরুল ইসলাম উরফে মাতুফ’র (৩৮) বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট মো. ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯(৩) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ছাড়াও পাঁচজনকে এক লাখ টাকা করে অর্থ দন্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৫ মে রাত প্রায় তিনটার দিকে আসামিরা সিধ কেটে (মাটি গর্ত করে) ঘরের প্রবেশ করে ঘুমন্ত দুই বোনকে বেঁধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় সৌর বিদ্যুতের আলোয় জয়নুলকে চেনেন ধর্ষিত দুই বোনের বাব মো: ওয়াহিত আলী। পরদিন জয়নুলের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫ জনকে আসামি করে তিনি বিয়ানীবাজার থানায় একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার নং-১৭ (২৫-০৫-১৪)। পুলিশ জয়নুল ও তার ছোট ভাই ফখরুলকে গ্রেফতার করে সঙ্গীদেরও চিহ্নিত করে। পরে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে কালাম, হাসনু ও সেলিমকে গ্রেফতার করে। আদালতে ৪ জনই ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তদন্ত শেষে বিয়ানীবাজার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর আদালতে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। ২০১৬ সালের ২৩ আগষ্ট আদালতে অভিযোগ গঠন হয়। ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
ধর্ষিত দুই বোনের বাবা একজন চানাচুর বিক্রেতা। তিনি অভাবের মধ্যেও মেয়ে দুজনকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। বর্তমানে দুজন কলেজে পড়াশোনা করছেন। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি ঝালমুড়ি বিক্রি করি দুই পুরিরে (মেয়ে) পড়াইরাম। ই-ঘটনার পরও আমি তারারে পড়া থাকি বিরত রাখিনি। গ্রামের মানুষও আমারে সহায়তা করছইন। বিচার পাইছি, এখন চাই পলাতক আসামি যাতে ধরা পড়ে আর ই-রায় যাতে বহাল থেকে। আর কোনো চাওয়া নাই আমার।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ইকবাল আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, গরিব ঘরের স্কুল-পড়ুয়া দুই মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হওয়ায় অনেকের দুর্ভাবনা ছিল ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে। রায়ে সেই সংশয় দূর হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায় সমাজে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সহায়তা করবে।