দুগ্ধ খামার রক্ষায় পদক্ষেপ জরুরী

11

করোনাভাইরাস সংক্রমণের অভিঘাত পড়েছে অর্থনীতির প্রতিটি খাতে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেও পড়েছে, বিশেষ করে দুগ্ধ খামারগুলোতে। করোনা সংক্রমণজনিত উদ্বেগের মধ্যে বিভিন্ন দুধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় খামারিরা বিপাকে পড়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার আট শর বেশি খামারি বিপত্তিতে পড়েছে। মিষ্টির দোকান ও চা স্টল বন্ধ, হাট-বাজারে লোকের উপস্থিতি কমে গেছে, খোলাবাজারেও খুচরা দুধের চাহিদা কমে গেছে। খামারিরা খোলাবাজারে পানির দরে দুধ বেচতে বাধ্য হচ্ছে। তা-ও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বিক্রি করতে পারছে না। দেশে বছরে প্রায় ৯৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়, যা মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ। এখন প্রতিদিন ১৫০ লাখ লিটার দুধ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। খামারিদের দিনে প্রায় ৫৭ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার দুধের খামারগুলো থেকে মিল্ক ভিটা, মিষ্টির কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে সারা দেশে বাজারজাত করে থাকে। করোনা সংক্রমণজনিত কারণে কর্ণফুলীর দুগ্ধ খামারিরা সংকটে পড়েছে। তাদের ভাষ্য, করোনার প্রভাবে হঠাৎ করে গরুর খাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। উৎপাদন হলেও বিক্রি করতে না পেরে তারা দুধ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছু দুধ বিক্রি হলেও দাম কম ৩০ টাকা লিটার। এতে তারা লোকসানের মুখে পড়ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজারে প্রায় সব কিছু বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা অনেক কমে গেছে। ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে, শিশুদের জন্য জরুরি দুধের বিপণন স্বাভাবিক রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে অ্যাসোসিয়েশন। কুষ্টিয়া জেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেছেন, কয়েক দিন ধরে সারা দেশে মিষ্টির দোকান বন্ধ। ফলে তাঁরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। গোখাদ্যের দাম বাড়ছে। খুচরা বাজারে ২০ থেকে ৩০ টাকা লিটার দরে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। তা-ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় জোর করেই দিতে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ দুধ অবিক্রীত থাকছে। ফরিদপুর জেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও প্রায় একই কথা বলেছেন। খুচরা বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে; অর্ধেকই অবিক্রীত থাকছে। বরিশাল বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্যও একই।
শুধু দুধের খামার নয়, আরো অনেক ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, যেমন মিষ্টি উৎপাদন শিল্প বিপাকে পড়েছে। সহায়তা না পেলে প্রায় ৫০ শতাংশ দুধের খামার বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার তাদের জন্য যথোচিত পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।