শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় স্ত্রীর দায়ের করা মামলা ॥ ষ্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া ওসি আব্দুল জলিলসহ ৬ জনের পক্ষে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

80

শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা :
শ্রীমঙ্গল থানার ষ্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া সাবেক ওসি জলিল কৃর্তক সাংবাদিক সাইফুল ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনায় স্ত্রী রুমির বেগম মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলা তদন্ত প্রতিবেদন দীর্ঘ দিন পর মৌলভীবাজার গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) আসামী ওসি আব্দুল জলিলসহ ৬জনের পক্ষে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন।
আগামী ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ডিবি মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়্যাল আদালতে নারাজি দাখিল করবেন মামলা বাদী রুমি বেগম।
গত ৩০ আগস্ট ২০১৫ ইং তারিখে মৌলভীবাজার গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) উপ-পরিদর্শক মো: রশিদ উদ্দিন এ প্রতিবেদন জমা দেন। নির্যাতিত সাংবাদিক সাইফুল দৈনিক জনতার ও মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত পাতাকুঁড়ি দেশ পত্রিকায় কর্মরত আছেন।
জানা যায়, সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল দৈনিক জনতায় “শ্রীমঙ্গল থানার ওসির বিরুদ্ধে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ”ও মৌলভীবাজার প্রকাশিত বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পাতাকুঁড়ি দেশ পত্রিকায় শিরোনামে এসব সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিক সাইফুল ইসলামকে শহরের ক্যাথলিক মিশন রোড এলাকা থেকে সাদা পোষাকে ওসিসহ তিন পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। পরে ওসি আব্দুল জলিল (বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড) নেতৃত্বে ও এসআই গিয়াস উদ্দিন (বর্তমান মৌলভীবাজার মডেল থানা), মৌলভীবাজার ট্রাফিকের (টিআই)  মাহফুজ (বর্তমান তার বাসা শ্রীমঙ্গল বিরাইমপুর), এসআই মাসুদ আহমদ (বর্তমান খুলনা), এএসআই আবুল বাশর এবং এসআই জাকির হোসেন (শ্রীমঙ্গল) সাংবাদিক সাইফুল ইসলামকে আবুগারীব ষ্টাইলে রাতভর নির্যাতন করে। পরদিন ২৪ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে কথিত পেট্রোল বোমা মামলা ও তাৎক্ষণিক দায়ের করা মিথ্যা পুলিশ এসল্ট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়। পরে সাংবাদিক সাইফুল ৩৮ দিন কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আসেন।
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় সাংবাদিক সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রুমি বেগম ১৩ মে দুর্নীতিও চাঁদাবাজ ওসি জলিলকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২/৩জন আসামী করে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জুলফিকার আলীর আদালতে মামলা দায়ের করেন। আসামি ওসি আব্দুল জলিল গং ৬ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ১৪৩/৩২৩/৩৪১/৩২৫/৩০৭/৩৮৫/৩৪ ধারায় মামলা রুজু হয়। মোকদ্দমা নং ২৭৪/১৫,২৮৪ তারিখ স্মারক নং-২৮৪,তারিখে ১৩.০৫.২০১৫ইং।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মৌলভীবাজার গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির ওসিকে ১৪.০৭.২০৫ইং তারিখে প্রতিবেদন জমার তারিখ থাকলে ডিবি মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। পরবর্তীতে ডিবি ৩০/০৮/২০১৫ তারিখে আসামী দ্বারা প্রভাবিত হইয়া ডিবি তদন্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল বাছেত ও এসআই রশিদ উদ্দিন আসামীদের পক্ষে মিথ্যা বানোয়াট ও কথিত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেন।
ডিবি এসআই রশিদ উদ্দিন  তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ২৩ এপ্রিল রাতে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি জলিল ও ওসি তদন্ত কে এম নজরুল ইসলাম, এসআই গিয়াস উদ্দিন, এএসআই আবুল বাশার এবং অন্যান্য অফিসারগণ শহরের ক্যাথলিক মিশন রোডের অরুন দেবের বাসার সামনে পৌঁছা মাত্র আসামী সাইফুল ইসলাম এর সঙ্গে আরো ৩/৪জন অজ্ঞাতনামা আসামী লোহার রড দিয়ে ওসি জলিলের মাথায় আঘাত করে। এ সময় ওসি সাহেব মাথা কাত করিলে লোহার রডের আঘাত ওসির বাম পায়ের গোড়ালিতে পড়িয়া হাড়ভাঙ্গা জখম হয়। আসামী সাইফুল এসআই গিয়াসকে লাথি মারিয়া রাস্তার পার্শ্বে দেয়ালের উপর ফেলে দিলে তার ডান এবং বাম হাতের কনুইয়ের উপর ছিলা রক্তাক্ত জখম হয়। তখন অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামীগণ এএসআই আবুল বাশারকে লাথি মারিয়া আহত করে। অন্যান্য আসামী পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় ধৃত করেন। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছেন, মামলা বাদীনি কর্তৃক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট এই রূপ আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমান সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম দরখাস্তখানা বিভাগীয় তদন্ত করেন। তদন্তকালে তাহার কোন সত্যতা পাওয়া যায় নাই।
নির্যাতিত সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি রাতে ১০টার দিকে তার শশুর মৃত হাজী আব্দুল গণি বাসা থেকে নিজ বাসার উদ্দ্যেশ্যে বের হয়ে ক্যাথলিক মিশন সড়কে রিকসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। হঠাৎ সিএনজি থেকে সাদা পোষাকে ৪/৫জন আমাকে ঝাপটেমারে ধরে। আমি ছিনতাইকারী ভেবে তাদের সাথে দস্তাধস্তি তাদের হয়। কারণ আমার সাথে থাকা ১টি ল্যাপটপ ও বেগে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ১টি সনি মোবাইল সেট, ২টি নরমেল ফোন সেট, এটি দামী ঘড়ি, এক জোড়া জুতা, ১টি মডেম ছিল। পরে তিনি চিন্তে পারেন ওসি আব্দুল জলিল ও এস আই গিয়াস উদ্দিন, এএসআই আবুল বাশার এবং ওসির দালাল মাদক ব্যবসায়ী সাহেদ। তিনি বলেন, তাকে আটক করার সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) কে এম নজরুল ও অন্যান্য কোন অফিসার ছিলেন না।
তিনি বলেন, ২২ এপ্রিল দৈনিক জনতায় ওসির বিরুদ্ধে “শ্রীমঙ্গল থানার ওসির বিরুদ্ধে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করায় ২৩ এপ্রিল ওসি আক্রোশমূলক সংবাদ প্রকাশের জেরে তাকে আটক করে টেনে হেঁচড়ে গাড়ীতে উঠায়। পরে থানায় নিয়ে আবুগারীব স্টাইলে নির্যাতন করে তার হাত-পা থেঁতলে দেয়। পুলিশ আমার ল্যাপটপ, নগদ টাকা,ঘড়ি মোবাইলসহ অন্যান্য মালামাল আদালতে জমা বা তাকে দেইনি। তিনি আরো বলেন, আগামী ১২ নভেম্বর মামলার ধার্য তারিখ। ওই তারিখে আদালতে মামলার নারাজি দাখিল করবেন এবং সুবিচারের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন আদালতের কাছে।
প্রসঙ্গগত: শ্রীমঙ্গল থানার সাবেক ওসি আব্দুল জলিল জেলার রাজনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) থেকে পদোন্নতি পেয়ে একই জেলার শ্রীমঙ্গলে ওসি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর থেকে শ্রীমঙ্গলে ঘটেছে স্মরণকালের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। প্রায় প্রতিরাতেই ঘটছে চুরি, ডাকাতি, খুন ও খুনসহ ডাকাতি। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে একাধিক খবর ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়।