সিলেটেও আতংক, সুনামগঞ্জে ১৯ শিক্ষার্থী আহত

27

Photo-2স্টাফ রিপোর্টার
২৬ ঘন্টার ব্যবধানে ভূমিকম্পে সারাদেশের মতো আবারও সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব ছিল কয়েক সেকেন্ড। ফের ভূমিকম্পে সিলেটের জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, নেপালের কোদারি অঞ্চল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। এটা ঢাকা থেকে ৭১২ কিলোমিটার দূরে। আর সিলেট থেকে আরো কিছু দূরে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬। আর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
এদিকে, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দেয় আতঙ্ক। নগরীর বিভিন্ন বহুতল ভবনে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে নেমে আসেন নিচে। অপরদিকে, ভূমিকম্পের কারণে সিলেটে বহুতল ভবনের ওপর মানুষের আতঙ্ক মেশানো দৃষ্টি যাচ্ছে। এতে, দুপুর ২ টার দিকে সিলেটের বহুতল ভবন সুরমা টাওয়ার হেলে পড়েছে বলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সুরমা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই টাওয়ারের নিচে সুরমা মার্কেটের অবস্থান। সেখানে অনেক ছোট ছোট দোকান আছে। নিচ থেকে দেখতে মনে হয় সুরমা টাওয়ার পূর্বদিকে হেলে পড়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সুরমা টাওয়ারের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এমডি) মামুন খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে মানুষের মনে আতঙ্ক থেকে এই সন্দেহ বাসা বেঁধেছে। এটা কিছুদিন পর এমনিতেই স্বাভাবিক হবে। টাওয়ারের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত শনিবার সারা দেশে ভূমিকম্প অনভূতি হয়েছিল। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালের পোখরার পার্শ্ববর্তী লামজুংয়ের ৩৫ কিলোমিটার পূর্বে। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৫।
আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ থেকে জানিয়েছেন : রবিবার বেলা ১.১২টায় সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জ জেলায় আবারও ভূমিকম্প হয়েছে। বড় ধরনের তেমন কোন ক্ষতি না হলেও এই মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ভয়ে কম্পমান হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেশ কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভূমিকম্পে অজ্ঞান হয়ে পড়লে শহরের মল্লিকপুর আবাসিক এলাকার বিন্দু দাসের পুত্র জ্যোতি দাস (১০), ষোলঘর আবাসিক এলাকার ফনীভূষন দাসের পুত্র হিমু দাস (১৩) ও মাইজবাড়ি গ্রামের ইদ্রিছ আলীর কন্যা লাকি বেগম (১৫) কে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। জেলা সদর হাসপাতালের ডাঃ অতনু ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভূকম্পনের মারাত্মক ভয়ে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। ভূমিকম্পনের সময় শহরের সরকারী কালীবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের সামনের দিকে কিছুটা অংশ ধেবে যায়। এ সময় আতঙ্কিত স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও আশপাশের লোকজন বাড়িঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। অপরদিকে শহরের মল্লিকপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবনে ফাটল ধরেছে। এ সময় আরো ৩ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ১৩ জন আহত হয়েছে। তাদেরকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছ। দ্বিতীয় দিনের ভূমিকম্পে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভূমিকম্পনের সময় বিভিন্ন পুকুরের পানি রাস্তায় উঠে আসে। এ ব্যাপারে মল্লিকপুর মডের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  কানন বন্ধু রায় জানান, ‘ভূমি-কম্পের সময় আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়’। এছাড়াও জেলার ছাতক উপজেলায় অনুরুপ আকস্মিক ভূমিকম্পে ৩ স্কুলছাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কম্পনের ঝাঁকুনী অনুভূত হলে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতংক। প্রায় ৪৫ সেকেন্ড স্থায়ী ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প চলাকালে ৩ ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পড়ে। এর মধ্যে রাজমিনা আক্তার নামের দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেটস্থ এমএজি  ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সে ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের রহমত আলীর কন্যা। অজ্ঞান অবস্থায় একই গ্রামের মনাই মিয়ার কন্যা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী নার্গিস আক্তার ও একই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী নুছরাত ইসলামকে স্থানীয়ভাবে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।