শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য ॥ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ছুটি কমানো ও পরীক্ষা পেছানোর ভাবনা

40

7_130502কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পেয়ে উৎফুল্ল হয়; অভিভাবকরাও হন টেনশনমুক্ত। কিন্তু এ বছরের শুরুতে তেমনটি হয়নি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতালের কারণে ৫ জানুয়ারি থেকে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিত বন্ধের কবলে পড়ে। প্রতিনিয়ত পেট্রলবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণের আতঙ্কে দিন কেটেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। তবে চলতি সপ্তাহে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
সোমবার ঘুরে দেখা যায়, প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। দীর্ঘদিনের অঘোষিত বন্ধের পর আবার সরব হয়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ইট-বালুর এ শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠই শিক্ষার্থীদের বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র। সকাল থেকেই সেখানে ছেলেমেয়েদের ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকে দেখা গেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড়। দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে উৎফুল্ল ছিল শিক্ষার্থীরা। সবার একটাই চাওয়া, আর যেন বন্ধ না হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ছাত্রছাত্রীদের এ উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তবে তারা মনে করেন, গ্রীষ্মকালীন ও বিভিন্ন সরকারি ছুটি না কমালে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এছাড়া মে থেকে জুনে অনুষ্ঠিতব্য বিভিন্ন শ্রেণীর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষাগুলো কমপক্ষে এক মাস পিছিয়ে নেয়ার কথাও জানান তারা।
অবরোধ ও হরতালের প্রভাবে ৫ জানুয়ারি থেকে দেশের শিক্ষাঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর নামকরা স্কুল-কলেজ শুক্র এবং শনিবার ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। তবে চলতি সপ্তাহে এ বিপর্যয় অনেকটা কাটিয়ে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালু হয়েছে বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়। এদিকে ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্তের পর দেশের বেশিরভাগ সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
একটি কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গ্রীষ্মকালীন, ঈদ ও পূজার ছুটি কমিয়ে দেয়া হবে।
একটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শুক্র ও শনিবার ক্লাস পরীক্ষা চালু রাখা হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে প্রতিদিনই ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া বোর্ড পরীক্ষার দিনগুলোয় বিকালে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তামিমের মা বলেন, গেল সপ্তাহে শিক্ষকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। তাই আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি, অন্যরাও এসেছেন। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আলামিন জানায়, সে তার বাবার সঙ্গে নিয়মিত ক্লাসে আসে।
একটি কলেজের ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, হরতাল-অবরোধে ক্লাস চালু থাকলেও অভিভাবকরা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সন্তানদের কলেজে পাঠাতে চান না। তবে কয়েক দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে। কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমন বাঘুয়ার জানায়, চলতি সপ্তাহ থেকে সে নিয়মিত ক্লাসে যাচ্ছে।
একটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল বলেন, আমাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতির মাত্রা পরিমাপ করা সম্ভব হলেও শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ক্ষতিটা হয়েছে, তা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এর প্রভাব পড়বে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ওপর। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা প্রয়োজনে পিছিয়ে দেয়া হবে।
একাদশ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, চলতি সপ্তাহের রোববার থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়েছে। এর আগে শুধু শুক্র ও শনিবার ক্লাস চলত, তা-ও আবার অনিয়মিত।
একাদশ শ্রেণীর অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ক্লাসে আসতে চাই। কিন্তু শিক্ষকরা নিষেধ করেন। তবে গত (রুববার) থেকে ক্লাস নেয়া শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিবিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জানান, হরতাল-অবরোধের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষার শিডিউলে কিছুটা বিপর্যয় দেখা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্তের পর তা পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে।