কুলাউড়ায় আজগরাবাদে উচ্ছেদ আতঙ্কে ৪ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ

69

শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের আজগরাবাদ মৌজায় ভূমি নিয়ে জটিলতার কারণে উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে ৪ গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের ১০ হাজার মানুষ। তাদের ঘরবাড়ী, ফসলি জমি লিজ নেয়ার পাঁয়তারা করছে আজগরাবাদ চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। আতঙ্কিত মানুষেরা ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি ও কার্যালয়ের সম্মুখে গণ-অবস্থান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় কর্মসূচি পালন করেছেন।
আজগরাবাদ টি-এষ্টেট মৌজায় ফটিগুলী, পূর্ব ফটিগুলী, টাট্রিউলী ও পূর্ব টাট্রিউলী গ্রাম অবস্থিত। এ মৌজায় ১ হাজার ৭’শ একর ভূমি রয়েছে। বর্তমানে ভূমিগুলোর মধ্যে আজগরাবাদ চা-বাগানের ৫৩৬ দশমিক ৫১ শতাংশ, জনবসতি ৮৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও অবশিষ্ট ৩২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ ভূমি সংরক্ষিত বনের আওতাধীন। গ্রামগুলোতে ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে বংশানুক্রমে লোকজন বসবাস করে আসছে। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালের স্যাটেলমেন্ট জরিপকালে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ওই ভূমি রেকর্ডভূক্ত হয়। কিন্তু তৎকালীন জমিদার আলী আজগর খান জমিদারী প্রভাব বিস্তার করে এই মৌজার নাম তার নামীয় বাগানের নামে নামকরণ করে নেন।
সরেজমিন আজগরাবাদ এলাকায় গেলে পূর্ব-ফটিগুলী গ্রামের মাষ্টার বশির আলী, আব্দুল মালিক, দুদু মিয়া, জামাল মিয়া, রব উল্লা, ছুফি মিয়া, হাসানুজ্জামান ফরিদ, টাট্রিউলী গ্রামের আব্দুল মুসলিম, রকিব, জয়নাল মিয়া ফটিগুলী  গ্রামের সজ্জাদ মিয়া, আব্দুল মতিন জানান, সর্বশেষ ২০০৪ সালের স্যাটেলমেন্ট জরিপে পুনরায় ওইসব ভূমি আমাদের (জনবসতি এলাকার বাসিন্দা) নামে মাঠ পর্চা হয়, ২০০৫ সালে তসদিকও সম্পন্ন হয়। কিন্তু চলমান ৩০ ধারায় আপত্তি শুনানী আরম্ভ হলে, শুরু হয় বিপত্তি। স্যাটেলমেন্ট অফিসার আমাদের ভূমির হাল নাগাদ খাজনা রশিদ দেখতে চান। কিন্তু আমরা উক্ত মৌজার বিভিন্ন খতিয়ানের সরকারী খাজনা পরিশোধ করতে গেলে পৃথিমপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিস খাজনা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তারা জানায়, জমিদার ও চা বাগানের আপত্তির কারণে উক্ত মৌজার খাজনা পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। ফলে আমরা স্যাটেলমেন্ট অফিসারকে হালনাগাদ খাজনার রশিদ দেখাতে পারি নাই।
এদিকে আজগরাবাদ চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের আওতাধীন ৫৩৬ দশমিক ৫১ শতাংশ ও জন সাধারণের ঘরবাড়ী ফসলি জমিসহ ৮৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ মিলিয়ে সর্বমোট ১৩৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভূমি লিজ পেতে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ওই ৪ গ্রামের মানুষের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা দেয়। নিজেদের মাথা গোজার ঠাঁই (বসতভিটা) রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। গত মঙ্গলবার (১০ ফেব্র“য়ারি) এলাকাবাসী মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের কাছে স্মারকলিপি দেন, গত ১ ফেব্র“য়ারি কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্মারকলিপি দেন ও কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। গত ৯ ফেব্র“য়ারি সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় রহমতাবাদ (গারদ) বাজারে সহ¯্রাধিক লোকজন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন ও উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলামের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সহিদ বাবুলের সভাপতিত্বে ও সেলিম আহমেদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কর্মধার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজিব আলী, জেলা জাসদ নেতা আশিকুর রহমান ফটিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মুরইছড়া চা বাগানে মালিক নবাব আলী ওয়াজেদ খান বাবু, সমাজসেবক মুহিবুল ইসলাম আজাদ, ইউপি সদস্য আব্দুল মনাফ, আব্দুল মতিন, আওয়ামী লীগ নেতা মছদ্দর আলী, আব্দুল মুছলিম প্রমুখ।
স্থানীয় লোকজনের দাবি জানান, উক্ত ভূমি যদি লিজ দেয়া হয় তাহলে সরকার যেন তাদেরকে লিজ দেয়। অন্যথায় জনবসতিগুলো জীবন দিয়ে হলেও রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করনে।
আজগরাবাদ বাগান ব্যবস্থাপক মো. ফরিদ মিয়া জানান, আমরা কাউকে উচ্ছেদ করবো না। টি বোর্ডের অনুমোদিত জায়গা লিজ নেয়া হবে। ওই এলাকায় যদি কেউ বসতি করে তবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম জানান, এখানে ৫০-৬০ বছর থেকে জনগণ বসবাস করছে, এখান থেকে উচ্ছেদ করার কোন সুযোগ নেই। আমরা স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে আছি।
এব্যাপারে সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন জানান, অধিকাংশ ভূমি ডিসি খতিয়ানের হলেও যেহেতু জনবসতি রয়েছে তাই উক্ত ভূমি স্থানীয় জনগণ যাতে লিজ পায় সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে কথা বলব।