সংসদে ভাষণ দানকালে প্রধানমন্ত্রী ॥ জনগণ চাইলে বিএনপি-জামায়াত নিষিদ্ধ

41

PM1_bg_264265426কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে খুনি আখ্যায়িত করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খালেদা একটা খুনি। খুনির কাজ করছেন। উনিতো রাজনীতি করছেন না, দস্যুবৃত্তি করছেন। খালেদা খুনি জঙ্গিবাদের নেত্রী।’
তিনি বলেছেন, ‘তিনি (খালেদা) জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করার পর থেকে মানুষ পুড়িয়ে মারা যাচ্ছে। এদের মদদ দেওয়া, অর্থ সরবরাহ করার সাথে তার সম্পৃক্ততা আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এসময় মামলার তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল বুধবার (১১ ফেব্র“য়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু ও হাজী মো. সেলিমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান যে দলগুলা জঙ্গিকর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কি-না?
এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া যেটা করছেন সেটা তো রাজনীতি না। উনিতো রাজনীতি করছেন না, দস্যুবৃত্তি করছেন। এদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। দেশের মানুষ যদি চায়, জনগণ যদি চায় এমনিতেই তারা নিষিদ্ধ হবে এটাই হলো বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘আমি বার্ন ইউনিটে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা স্পষ্ট আমাকে বলেছে তাদের লক্ষ্য করেই পেট্রোল বোমা মারা হচ্ছে। এটাতো রাজনীতি না। দস্যুবৃত্তি। খালেদা  জনগণের নেত্রী না উনি জঙ্গিবাদের নেত্রী। বাংলা ভাই উনার সৃষ্টি। খালেদা বাংলা ভাইয়ের মা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার অপকর্মের ফলে দেশের মানুষ আজ যেভাবে ক্ষেপে গেছে তা থেকে রক্ষা পেতে উনি (খালেদা) নিজের ঘর ছেড়ে অফিসে থেকে নিরাপত্তার জন্য তার কাঁটার বেড়া দিয়ে নিজেকে আরও নিরাপদ করছেন। উনি কার হাত থেকে বাঁচার জন্য এটা করছেন? জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য।
আব্দুল মতিন খসরুর নাশকতা দমনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অনেক আইন আছে। আইনের কোনো অভাব নেই। সন্ত্রাস দমন আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন আছে। আইনগুলো সক্রিয় করা এবং আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি। এসব আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রীকে আমি বলেছি-  প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল না হলেও, বিশেষ কোর্ট নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য। যেখানে এ ধরনের ঘটনার (নাশকতা) সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা যায়। তাদের বিচার দ্রুত হওয়া উচিত। এ ধরনের নাশকতা মেনে নেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মানুষ খুন করার বিরাট আগ্রহ আছে। মানুষ খুন করে লাশের ওপর পা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা। তিনি নির্বাচনেও বিশ্বাস করেন না, ভোটেও বিশ্বাস করেন না। না হলে গত নির্বাচনের আগে আমি উপযাচক হয়ে তাকে ফোন করেছিলাম। আমাকে কিভাবে অপমান করা হয়েছে দেশের মানুষ তা দেখেছেন।
টেলিভিশন টক-শোতে সাংবাদিকরা নাশকতা উসকে দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না হাজী সেলিমের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। রাজনীতি করি খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। তাদের জন্য যতটুক করার আমরা করবো।
তিনি বলেন, সব থেকে দুঃখ লাগে- খালেদা জিয়ার পুত্র শোকে শোক জানাতে ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না যখন খালেদার বাসায় গেলেন, আমি ভেবেছিলাম উনাকে অনুরোধ করবেন এসএসসি (মাধ্যমিক) পরীক্ষার স্বার্থে হরতাল-অবরোধ প্রত্যার করার। আর বিএনপি নেত্রী চাইবেন কিভাবে হরতাল প্রত্যাহার করা যায়। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলোম তারা একবারের জন্যও হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের কথা বললেন না। এতো বড় বড় নেতা, তারা একাধারে রাজনীতি করেন, দল করেন। সেই সঙ্গে টক-শোতে যান। প্রাইভেট চ্যানেল আমার দেওয়া। আজ সেখানে বসে উসকে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আশা করি তারা খালেদা জিয়াকে এই আবেদন করবেন অবরোধ বন্ধ করার। খুন-খারাবি বন্ধ করার। কিন্তু তা বলেননি। তারা এতো বড় কথা বলেন, কই কোনো দিন তো বার্ন ইউনিটে যাননি। খালেদা লাশ ফেলে ক্ষমতায় যাবেন, উনারা সেই আশায় বসে আছেন। উনাদের সেই আশা পূরণ হবে না। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে। খালেদা জিয়া লাশ ফেলবে সেই লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাবে এটা দেশের মানুষ কখনই মেনে নেবে না।
৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে আলোচনায় বসার অনুরোধ করেছিলাম। নির্বাচনকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও তাদের প্রস্তাব করেছিলাম। তখন তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা আমি পাইনি।
রওশন এরশাদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া যখন থেকে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছে তখন থেকেই আমরা সক্রিয়। আমরা চিকিৎসা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছি। ব্যবসায়ী ব্যাংক মালিক সবাইকে সংগঠিত করে হাসপাতলে অর্থের সহায়তা দিচ্ছি। বিশাল এক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছি। শুরু থেকেই পোড়া মানুষের প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা করে আসছি।
তিনি বলেন, এটা ঠিক যে খালেদা জিয়া যখন হরতাল-অবরোধের ডাক দিলো। তখন হুকুম দিয়েছে এতে সন্দেহ নেই। জ্বালাও-পোড়াও অবশ্যই মামলা করতে হবে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশের মানুষ কি অপরাধ করেছে? এ দেশের মানুষ কি উন্নত হতে পারবে না? মানুষের শান্তি দেখেই উনার অশান্তি হচ্ছে। তাই উনি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছেন। অবশ্যই তার বিচার বাংলার মাটিতে হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশ ভালোভাবেই চলছিল। এক বছর ভালোভাবে চলার পর হঠাৎ করেই কোনো ইস্যু ছাড়াই তারা আন্দোলনের নামে নাশকতা করছে।
এরআগে দেশের কোনো হাসপাতেলেই বার্ন ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ৯৬’তে ক্ষমতায় এসে বার্ন ইউনিট চালু করি। শ্বাসনালী পোড়া রোগিদের চিকিৎসার জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পোড়া রোগিদের বিশেষ বেডের জন্য ৩ কোটি টাকা দিয়েছি। আরও বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন বার্ন ইউনিট চালুর উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতলে একটি বার্ন ইনস্টিটিউট আমরা করবো। আমি বলবো খালেদা জিয়া এভাবে মানুষ পোড়ানো থেকে বিরত থাকুন। অর্থ দিয়ে হুকুম দিয়ে মানুষ পোড়ানো বন্ধ করুন। এভাবে আর মানুষ মারবেন না।