অপহরণের সাড়ে ৪ মাস পর উদ্ধার হলো শিশু মাহফুজ

32

Opohoron Photo 28.01.15নগরীর হাউজিং এস্টেট আখলখুয়া মসজিদের সামন থেকে অপহরণের সাড়ে ৪ মাস পর উদ্ধার হলো আম্বরখানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র মাহফুজ আহমদ (১১)। সেই সাথে র‌্যাবের জালে ধরা পড়লো অপহরক মোঃ সাইফুল ইসলাম (সোহেল)।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় নগরীর হাউজিং এস্টেট আকলকুয়া মসজিদে এশার নামাজে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে ফুসলিয়ে ১১ বছর বয়সী শিশু মাহফুজ আহমদকে নিয়ে আসে। কিন্তু মসজিদে না গিয়ে তাকে অপহরণ করে সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর থানার দুঃখইনুই গ্রামের মৃত আব্দুল আহাদের পুত্র সাইফুল ইসলাম ওরফে সোহেল। অপহৃত মাহফুজ নগরীর হাউজিং এস্টেট এর বাসিন্দা নিম্নবিত্ত শরফ উদ্দিনের ছেলে। জানা যায়, ইতিপূর্বে সোহেল কিছু দিন মাহফুজদের বাসায় ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিল। দুশ্চরিত্রের জন্য তাকে এ দায়িত্ব থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অপহরণের পর শিশু মাহফুজকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকার পর সোহেল পাড়ি জমায় সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত ধর্মপাশা থানায়। সেখানে একটি মসজিদে ইমামতির চাকরীও নেয় এবং শিশু মাহফুজকে ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে মসজিদের হুজরাখানায় দিনযাপন করে।
এদিকে, অপহরণের পর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে মাহফুজের পিতা ও আত্মীয়-স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর অপহৃত মাহফুজের কোন সন্ধান পাননি। এমতাবস্থায় মাহফুজের পিতা শরফ উদ্দিন বাদী হয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ইং তারিখে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)-এর আওতাধীন বিমান বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ২০০০ (সংশোধন ২০০৩) এর ৭/৩০ ধারায় একটি অহরণ মামলা দায়ের করেন। পাশাপাশি অপহৃত শিশু মাহফুজকে উদ্ধারে সহায়তা প্রদানের জন্য র‌্যাব-৯ বরাবরে পৃথক একটি আবেদন করেন। সেই সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে মাহফুজকে দ্রুত উদ্ধার ও অপহরক সোহেলকে গ্রেফতারে মানবিক সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো (বিএইচআরবি) সিলেট বরাবরে মাহফুজের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদনও জানানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে বিএইচআরবি নেতৃবৃন্দ পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজ, র‌্যাব-৯, সিলেট বিমানবন্দর থানা ও অপহরকের গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থানা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি অপহৃতের পরিবারের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। পুলিশ ইতিপূর্বে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালালেও অপহৃত মাহফুজের সন্ধান পায়নি।
অবশেষে গত ২৭ জানুয়ারী সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানাধীন মহেশখালী বাজার এলাকায় র‌্যাব-৯ এর একটি দল ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪ মাস আগে অপহৃত স্কুল ছাত্র মাহফুজকে উদ্ধার এবং অপহরক সাইফুল ইসলাম সোহেলকে আটক করে। ঐদিন গভীর রাতেই অপহৃত ও অপহরককে সিলেট বিমানবন্দর থানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, সিলেট বিমানবন্দর থানা কর্তৃপক্ষ গতকাল ২৮ জানুয়ারী বুধবার আটককৃত অপহরক সাইফুল ইসলাম সোহেলকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। উদ্ধারকৃত শিশু মাহফুজকে গতকাল ভোরে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে স্কুল ছাত্র মাহফুজ উদ্ধারে তার পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অপহৃত মাহফুজ উদ্ধার ও অপহরক সোহেল গ্রেফতার হওয়ায় বাংলাদেশ মানাধিকার ব্যুরো (বিএইচআরবি) সিলেট সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিএইচআরবি নেতৃবৃন্দ শিশু মাহফুজকে উদ্ধার ও অপহরকে আটক করতে র‌্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও মানবিক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রয়াসের কথাও তারা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ মানাধিকার ব্যুরো (বিএইচআরবি) সিলেট এর নেতৃবৃন্দ গতকাল বুধবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন ও মাহফুজকে দেখতে তার বাসায় যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি এ.কে.এম শামিউল আলম, বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো (বিএইচআরবি) সিলেট বিভাগীয় সভাপতি ও দৈনিক সিলেট সংলাপ সম্পাদক মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান, বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোঃ মঈজ উদ্দিন, সিলেট জেলা সভাপতি এডভোকেট আব্দুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট এম.এ.করিম আকবরী, এডভোকেট এম.এ হান্নান, সিলেট মহানগর শাখার সদস্য ইজাজুল হক ইজাজ, ফাতিমা বেগম সাথী, মিস মুন্নী এবং ভিকটিম মাহফুজের দাদা মোঃ সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি