কামারুজ্জামানের বিচার ॥ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলো না আড়াই মাসেও

58

4_50696_0কাজিরবাজার ডেস্ক :
মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানে বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি আড়াই মাসেও।
অন্যদিকে রায় প্রকাশের পর তার ফাঁসি কার্যকর নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিভ্রান্তি। এ জটিলতা দূর হয় ফাঁসির দন্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর।
রিভিউ খারিজের সংক্ষিপ্ত রায়ের পর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলকে।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করেছেন। অপর বিচারপতিরা হচ্ছেনÑবিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
রিভিউ খারিজের এই পূর্ণাঙ্গ রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যাবে।
এই রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে দ-িতদের ক্ষেত্রেও আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য (মেনটেইনেবল) হবে। তবে তা আপিলের সমকক্ষ হবে না। সাধারণ মামলার ক্ষেত্রে রিভিউয়ের জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হলেও এ আইনের মামলায় তা প্রযোজ্য হবে না। ১৯৭৩ সালের এই আইনের অধীনে আপিলের রিভিউয়ের সময় হবে ১৫ দিন।
ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদন্ডের রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখলে এবং আসামীপক্ষ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে এর নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দন্ড কার্যকর করা যাবে না। আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ সাজার আদেশে বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনাল) মৃত্যু পরোয়ানা পাঠালে আসামী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। তবে প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের ক্ষেত্রে কারাবিধিতে উল্লেখিত ৭ বা ২১ দিনের সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না।
কাদের মোল্লার আপিলের রায়ের ৭৮ দিন পরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট। এর পর রিভিউ প্রাথমিক আবেদন খারিজ হওয়ার পর ১২ ডিসেম্বর রাতে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেন, জাতি এই রাজাকারের ফাঁসির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সে (কামরুজ্জামান) যে গণহত্যা করেছিল তার জন্য তাকে একবার নয়, হাজারবার  ফাঁসি দেওয়া যেতে পারে।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, গোটা জাতি এই রায়ের অপেক্ষায় আছে। তিনি বলেন, এই মামলার বিচারকরা তো ১৯৭১ সালের গণহত্যা দেখেছেন। তাই বিচারকদের প্রতি আমাদের দাবি আর দশটা মামলার মতো নয়, জনগণের আবেগকে মাথায় রেখে তারা দ্রুত এ বিচারের রায় প্রকাশ করা।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নয়, ট্রাইব্যুনালে আলাদা আপিল বিভাগের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের আলাদা আপিল বিভাগ স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে আমরা আগে দাবি জানিয়েছিলাম। সরকার আমাদের সে দাবি মানেনি। আমরা আগের সে দাবি এখনো জানাই। এতে করে আপিলের রায় প্রকাশ দ্রুত হয়।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি এ মামলার তিন বিচারকের মধ্যে দুজন তাদের রায় লিখে শেষ করেছেন। এখনো আরেকজন বিচারক এর রায় লেখা শেষ করেননি।
অন্যদিকে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, এটা এখন আদালতের বিষয়। আদালত যখন রায় প্রকাশ করবে তখন দেখা যাবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করা যাবে।
তিনি বলেন, রিভিউ আবেদন পূর্ণাঙ্গ রায়ের রেকর্ডে বড় ভুল থাকলে তার বিরুদ্ধে রিভিউ করা যাবে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করা যাবে না। রিভিউ আবেদন খারিজ করার উপর নির্ভর করবে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কখন হবে।
রিভিউ আবেদন খারিজ হলে এই রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছালে নির্বাহী আদেশে তার ফাঁসি কার্যকর হবে। আসামী পক্ষের আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মুনির বলেন,  পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর আমরা রিভিউ আবেদন করব। প্রাথমিক বিবেচনায় আমাদের কাছে যেটা ভুল মনে হয় সেগুলো আমরা তুলে ধরব। আর মাননীয় আদালত যদি সেটি বিবেচনায় আনে তাহলে সেগুলোর আবার শুনানি হতে পারে। আমরা আশা করি, মাননীয় আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করবে।