আমার দোষটা কোথায় খুঁজে পাই না -প্রধানমন্ত্রী

103

PM_banglanews24_206918169111কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা বোমা মেরে আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, তাদের হাত পুড়িয়ে দিলে বুঝতে পারবে পোড়ার কী যন্ত্রণা!
গতকাল শনিবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি আমার এই কথার সমালোচনা করার জন্য আঁতেলরা বসে রয়েছেন। কিন্তু তাদের আমি বলবো একবার বার্ন ইউনিটে গিয়ে ঘুরে দেখে আসুন সেখানে দগ্ধ মানুষগুলো কী যন্ত্রণা সইছে।
এনএসআই’র বহুতল প্রধান কার্যালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সে উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমার দোষটা কোথায় খুঁজে পাই না। কেন আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানো হচ্ছে, তাও বুঝি না। রাজনীতি জনগণের জন্য, জনগণকে পুড়িয়ে মারার জন্য নয়। অন্তঃস্বত্ত্বা নারী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কেউই এখন তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
হাসপাতালে দগ্ধ অন্তঃসত্ত্বা নারীর কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শুনেছি পেটের ভিতর শিশুটি মরে গেছে। নারীর সারা শরীর দগ্ধ। চিকিৎসকরা বুঝতে পারছেন না কিভাবে শিশুটির ডেলিভারি হবে। কি ভয়াবহ কথা। কি কষ্ট! ভারী হয়ে আসা কণ্ঠে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তাদের কষ্ট দেখে আমার কষ্ট হয়, আমি সারাক্ষণ তাদের খোঁজখবর রাখি। চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সবধরনের নির্দেশনা দেই, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলন করতে চাইলে মাঠে নেমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করুক।
‘বিএনপি-জামায়াত কোন ইসলামের সেবক আমার বোধগম্য নয়’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে এরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আগুন দিয়ে পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছে। এ বছর বিশ্ব ইজতেমা ও পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী চলাকালে হরতাল-অবরোধ ডেকেছে।
‘কী কারণে, কোন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে তা আমার বোধগম্য নয়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের পথে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন রোল মডেল হয়ে উঠেছে তখন বিএনপি-জামায়াত এই অপতৎপরতা শুরু করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দেশের উন্নয়ন হয়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তারপরও কেন আন্দোলন তার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না।
অনুষ্ঠানে এনএসআইয়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রয়োজনে এনএসআই সবচেয়ে বেশি ও বৃহৎ পরিসরে তৎপরতা দেখিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা রয়েছে।
এনএসআইয়ের সামর্থ্য বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সকল গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান জরুরি বলে মত দেন।
এছাড়া, প্রয়োজনে এনএসআই সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আজ যে স্বর্ণ ধরা পড়ছে তা এনএসআই গোয়েন্দাদের তৎপরতার ফলেই সম্ভব হচ্ছে। তাদের তৎপরতায় মাদকদ্রব্যও ধরা পড়ছে।
চোরাচালান ও চোরাকারবার বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে এনএসআই কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসবের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বিভিন্ন সময় এনএসআই-কে যে কোনও কারণেই হোক অবহেলার চোখে দেখা হতো। কিন্তু তার সরকার এনএসআইকে তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে কারও কিছু চাইতে হবে না। সরকার তার প্রয়োজনেই সকল বিভাগকে কার্যকর করে তুলতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবে।
শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন, আমরা এনএসআই’র সামর্থ্য বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। গত ছয় বছরে আমরা এনএসআইয়ের কাজের পরিধি ও ব্যাপ্তি বিবেচনায় এনে অনেক নতুন পদ সৃষ্টি করেছি। পরিবহন সুবিধা বাড়িয়েছি। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার নিজস্ব ভবন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর সে কারণেই এই ২০তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এনএসআই সদস্য-কর্মকর্তাদের কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে ৩০ ভাগ ঝুঁকিভাতা মঞ্জুর করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসময় তিনি শনিবার সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এনএসআই কর্মকর্তার কথা স্মরণ করে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সববেদনা জানান।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী ও এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শামসুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শনিবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এনএসআই সদস্য আব্দুস সাত্তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।