কিবরিয়া হত্যা মামলার ৭ আসামীর হাজিরা ॥ পলাতক আসামীদের মাল ক্রোকের আবেদন

34

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার নির্ধারিত তারিখ গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ আসামী হাজিরা দিয়েছেন। হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তার এর আদালতে তারা হাজিরা দেন।
এ সময় বাদী পক্ষে এডভোকেট আলমগীর ভূঁইয়া বাবুল কিবরিয়া হত্যাকান্ডের বিচার ত্বরান্বিত করতে পলাতক আসামীদের মাল ক্রোকের জন্য আবেদন করেন। বিচারক এ ব্যাপারে নথি দেখে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানান এবং ২৫ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় বহুল আলোচিত কিবরিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে ২০০৫ সালের ১৯ মার্চ সিআইডির সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটে জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ুম, জেলা বিএনপি কর্মী ও ব্যাংক কর্মকর্তা আয়াত আলী, কাজল মিয়া, জেলা ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জিয়া স্মৃতি গবেষণা পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী, কর্মী তাজুল ইসলাম, বিএনপি কর্মী জয়নাল আবেদীন, স্থানীয় বিএনপি নেতা জমির আলী, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন মোমিন ও ছাত্রদল কর্মী মহিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়। গতকাল যখন কিবরিয়া হত্যাকান্ডের মামলার কার্যক্রম শুরু হয় তখন জয়নাল আবেদীন জালাল ছাড়া সবাই হাজির ছিলেন। তারা সকলেই জামিনে রয়েছেন।
গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র এএসপি মেহেরুন্নেছা পারুল হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তারের আদালতে চার্জশীট জমা দেন। এই চার্জশীটে নতুন ১১ জনকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অন্তর্ভূক্ত আসামীরা হলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হারিছ চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব জি কে গউছ, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি তাজ উদ্দিন, মুফতি সফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, বদরুল, মহিবুর রহমান, কাজল আহমেদ ও হাফেজ ইয়াহিয়া। একই সাথে পূর্বের চার্জশীটভুক্ত ইউসুফ বিন শরীফ, আবু বক্কর আব্দুল করিম ও মরহুম আহছান উল্লাহকে চার্জশীট থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। এই ১১ আসামীর মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী ও জি কে গউছ ছাড়া অন্য ৯ জন পলাতক। চার্জশীটে আসামী সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নাম লেখা হয় আরিফুল ইসলাম। এছাড়াও হবিগঞ্জের মেয়ার জি কে গউছের ঠিকানা শায়েস্তানগরের ক্ষেত্রে লেখা হয় শায়েস্তাগঞ্জ এবং জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি। ৩ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার নির্ধারিত তারিখে এই ত্র“টির জন্য বিচারক হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোকেয়া আক্তার চার্জশীট ত্র“টিমুক্ত করে নতুন করে জমা দেয়ার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পরে ২১ ডিসেম্বর আবারও ত্র“টিমুক্ত করে চার্জশীট দিলে বিচারক হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রশিদ আহমেদ মিলন তা গ্রহণ করে পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।
পরে ২৮ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউছ ও ৩০ ডিসেম্বর সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়া, তার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ছিদ্দিক আলী, আবদুর রহিম ও আবুল হোসেন। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি, এডভোকেট আবদুল আহাদ ফারুক, আবদুল্লাহ সর্দারসহ আহত হন ৭০ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মজিদ খান এমপি বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।