প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাগরের খোলা চিঠি ॥ “আপনি শুধু সোহাগ ভাইকে একবার বলুন আমরা ছাত্রলীগের কর্মী”

40

স্টাফ রিপোর্টার :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের রক্তক্ষয়ী বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি হুসাইন মোহাম্মদ সাগর প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন। সাগর ওই ইউনিভার্সিটির মাষ্টার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। আবেগপ্রবণ ভাষায় লেখা ওই খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমি হুসাইন মোহাম্মদ সাগর। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মাষ্টার্স ১ম বর্ষের একজন ছাত্র। বংশ পরক্রিমায় আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রাজনীতির সাথে জড়িত। আমি যখন বুঝতেই শিখিনি, তখনই বাবা-ভাইদের সাথে গ্রামের মেঠো পথ ধরে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে ছোট বাজারে যাই। আমার বড় ভাই বর্তমান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আমি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি মূলতঃ শিবিরের আস্তানা হিসেবে সিলেটে পরিচিত ছিল। যার প্রতিটি সেমিস্টারে ছিল শিবিরের সাংগঠনিক কমিটি। আজ এই ক্যাম্পাসটি শিবির মুক্ত। আমি, নিহত সুমন চন্দ্র দাস ও ছাত্রলীগের আদর্শে অনুপ্রাণিত তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসটি শিবির মুক্ত করি। যা তখন বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় এসেছে। সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মাননীয় নেত্রী, গত কয়েকদিন পূর্বে শাবিপ্রবিতে হামলার ঘটনা সম্পর্কে আপনি কিছুটা অবগত আছেন। সেদিন সকাল নয়টার দিকে আমার কাছে খবর আসে, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন দাসের উপর হামলা হয়েছে। নিজের একজন সহকর্মী ভাইয়ের উপর হামলার কথা শুনে আমি, সুমন চন্দ্র দাসসহ ১০/১৫ জন তাৎক্ষণিক ছুটে যাই। গিয়ে সেখানে হতবিম্বল হই। সেখানে পূর্বে থেকে ওৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মত গুলি চালায়। ওদের গুলি আমার সামনে থাকা সুমন চন্দ্র দাসের উপর লাগে। সে তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটে পড়ে। তাকে আনতে গিয়ে একটি গুলি আমার পেটে আঘাত করে। আরো কয়েকজন বন্ধু গুলিবিদ্ধ হয়। সুমন চন্দ্র দাস হাসপাতালে আনার সাথে সাথে মারা যায়। আমি সহ আরোও কয়েকজন বন্ধু শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন দাস গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনও হাসপাতালের বেডে শুয়ে নিহত সুমনের যাত্রী হওয়ার প্রহর গুণছি। সুমন যেন আমাদেরই ডাকছে। বলছে, বাড়ি থেকে মায়ের হাতের নাড়– এনেছি। আমি কি একা খাবো, তোরা খাবে না? মাননীয় নেত্রী, গুলিবিদ্ধ হলাম আমরা। এক সহযোদ্ধাকে সারাজীবনের জন্য হারালাম। আমরা আবার গ্রেফতার। তাতেও দুঃখ নেই। এরচেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ভাই সত্যিকার ঘটনা না জেনে (যা পত্রপত্রিকায়ও এসেছে) তথ্য বিভ্রাটে প্ররোচিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিহত সুমন চন্দ্র দাস ছাত্রলীগের কেউ নয়। তখন আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না, প্রাণপ্রিয় নেত্রী। সুমন ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান এবং তিন বোনের একমাত্র আদরের ভাই। সে আমাদের প্রায়ই বলত, সে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণাতে। সেজন্য সবসময় মিছিলের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিত। তার মৃত্যু হয়েছে সামনে থাকার জন্য। মাননীয় নেত্রী, আপনার কাছে প্রশ্ন, ছাত্রলীগের কমিটিতে কয়জন কর্মীর স্থান আছে? প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাজার হাজার, লাখো লাখো কর্মী রয়েছে। আপনি জানেন, অধিকাংশ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে দশ বছর পর্যন্ত পার হয়ে যায়। তাই সুমন চন্দ্র দাসের মত ত্যাগী কর্মীরা নেতা হতে পারেনা। এরা কর্মী হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখে। আর সুমন ও আমাদের মত কর্মী দিয়ে সোহাগ ভাইরা নেতা। এজন্য সুমন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে, সন্ত্রাসীদের গুলিতে জীবন দিয়েও ছাত্রলীগের কর্মী হতে পারল না। আমার মনে হয় তার নামের সাথে দাস না থাকলে হয়তো তাকে শিবির বলে চালিয়ে দেওয়া হত। নেত্রী আপনার কাছে আকুল আবেদন হাসপাতালের বেডে শুয়ে, বাঁচবো কিনা মরবো জানিনা। বাঁচলে পুলিশী নির্যাতন কবে বন্ধ হবে জানিনা। কিন্তু আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই- কমিটির গঠনের দীর্ঘ সূত্রিতায় যে লাখ লাখ কর্মী কমিটিতে স্থান পায় না, তারাও ছাত্রলীগের কর্মী। আমার বন্ধু মারা গেছে, আমরা গুলিবিদ্ধ হয়েছি, পুলিশ নির্যাতন চালাচ্ছে, তাতে কষ্ট নেই। আপনি শুধু সোহাগ ভাইকে একবার বলুন আমরা ছাত্রলীগের কর্মী, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমাদের সেই অধিকারটুকু যাতে উনি কেড়ে না নেন।’