প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না দলের প্রধান, রাষ্ট্রপতি হবেন

7

কাজির বাজার ডেস্ক

কোনো দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বলে প্রস্তাব করেছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন। বুধবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিকেলে সংসদ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ইসি সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
বদিউল আলম মজুমদার জানান, ১৬টি ক্ষেত্রে প্রায় ১৫০টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ‘ভাঙা’ নির্বাচনব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার পাশাপাশি সব অংশীজনকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার লক্ষ্যে এই সুপারিশগুলো করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-
কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কোনো দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি হবেন নির্দলীয়। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচন দেওয়া। ২০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে তত্ত¡াবধায়ক সরকার। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হবে। দুইবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কেউ যেন রাষ্ট্রপতি না হন। একই সঙ্গে কেউ প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান পদে থাকতে পারবেন না। সংসদের উচ্চকক্ষ হবে সংখ্যানুপাতিক ভিত্তিতে। উচ্চকক্ষের অর্ধেক সদস্য হবেন দলীয়, বাকি অর্ধেক হবেন নির্দলীয়। নির্দলীয় সদস্যদেরও রাজনৈতিক দলগুলোই মনোনয়ন দেবে। কিন্তু সেখানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ হবে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে। সংসদের আসন ১০০টি বাড়ানো। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা এবং এগুলো ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচন করা। যার মাধ্যমে নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হবেন।
অপরদিকে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুসারে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর এবং তিনি দুইবারের বেশি এই পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হবেন আইনসভার নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের ভিত্তিতে। বুধবার সংবিধান সংস্কার কমিশন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয়। অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোটের বিধান পুনর্বহালের প্রস্তাবও করেছেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হবে চার বছর এবং তিনি দুইবারের বেশি এই আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচকমÐলীর (ইলেকটোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে নির্বাচিত হবেন।
ইলেকটোরাল কলেজ বা ভোটারদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচকমÐলী আইনসভার উভয় কক্ষের সদস্য প্রতি একটি করে ভোট; প্রতিটি ‘জেলা সমন্বয় কাউন্সিল’ সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট [উদাহরণ : ৬৪টি ‘জেলা সমন্বয় কাউন্সিল’ থাকলে ৬৪টি ভোট]; প্রতিটি ‘সিটি কর্পোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল’ সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোটের মাধ্যমে এটি গঠিত হবে।
সুপারিশের রাষ্ট্রপতি অভিশংসনের বিষয়েও বলা হয়েছে- রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করা যাবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনসভার নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হবেন। আইনসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে কিংবা আস্থা ভোটে হেরে গেলেই শুধু ওই পদ থেকে সরে যেতে পারবেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি কোনো কারণে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। তিনিও রাষ্ট্রপতির মতো দুইবারের অধিক এক পদে থাকতে পারবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো দলের প্রধান বা সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) মধ্যে তিনটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র বহাল রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার নতুন আরো চারটি মূলনীতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমানে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চার মূলনীতি রয়েছে সেগুলো হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, তাতে রাষ্ট্র পরিচালনার এই চার মূলনীতি গৃহীত হয়েছিল।
সংস্কার কমিশন বর্তমানের চার মূলনীতির মধ্যে শুধু গণতন্ত্র বহাল রেখে নতুন চারটি মূলনীতির সুপারিশ করেছে। এতে সব মিলিয়ে মূলনীতি হবে ৫টি। সুপারিশ করা নতুন পাঁচটি মূলনীতি হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে এই পাঁচটি নীতি প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর তিন মূলনীতি বাদ দেওয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশন সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করছে।

নির্দলীয়