মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

3

দালালচক্রের মিথ্যা আশ্বাসে প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি তরুণ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের পরিণতি হয় অত্যন্ত মর্মান্তিক। হয় সাগরে ডুবে মারা যায়, না হয় মরুভ‚মিতে অনাহারে বা তৃষ্ণায় জীবন যায়। কখনো কখনো ঠাঁই হয় গণকবরে।
অনেক সময় জিম্মি করে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয় এবং তাদের পরিবারকে বাধ্য করা হয় আরো মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিতে। তার পরও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক তরুণই দালালদের পাতা ফাঁদে পা দেয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাজধানীর অত্যন্ত কাছে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার এমন হাজারো তরুণের মর্মান্তিক পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতারকচক্রের শতাধিক কর্মী গ্রামে গ্রামে ঘুরে উন্নত জীবন ও লোভনীয় বেতনের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তরুণদের ফাঁদে ফেলে।
কিন্তু বছরের পর বছর এই অবৈধ কারবার চললেও এবং বহু তরুণের জীবনাবসান হলেও প্রশাসন নির্বিকার।
প্রতিবেদনে অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আড়াইহাজারের মানিকপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান কখনো মাছ ধরে, কখনো কৃষিকাজ করে তিন সন্তানসহ পাঁচজনের সংসার চালাতেন। দালালদের প্রলোভনে পড়ে ২০১৩ সালের জুনে মালয়েশিয়ার পথে পা বাড়িয়েছিলেন।
দালাল ইব্রাহিম নকিবের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। বিমানে না নিয়ে তাঁকে নেওয়া হয় টেকনাফে, তুলে দেওয়া হয় গরুবাহী ট্রলারে। এরপর ১১ বছর কেটে গেছে। স্ত্রী আজও জানেন না, তাঁর স্বামী জীবিত আছেন কি না। আড়াইহাজার উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে এমন অনেক পরিবার, যারা পরিবারের কোনো না কোনো নিকটজনকে এভাবে হারিয়েছে।
কিন্তু ইব্রাহিম নকিব, ইসমাইল হোসেনসহ অন্য পাচারকারীরা দিব্যি আছেন, কোটিপতি হয়ে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। এক ইব্রাহিম নকিবেরই রয়েছে এলাকায় চারটি বহুতল বাড়ি, রয়েছে এক মৌজায়ই ১৫ একর জমি। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, তাঁর আরো অনেক সম্পদ রয়েছে।
২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের অনেক গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সমুদ্রপথে যাওয়ার সময় যারা মারা যায়, তাদের মৃতদেহ সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। অনেক সময় তাদের আবার আন্তর্জাতিক মানব কারবারিদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মায়ানমার কিংবা থাইল্যান্ডের জঙ্গলে রয়েছে টর্চার সেল। সেখানে নির্যাতন করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। সেই ভিডিও পরিবারকে দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে আরো অর্থ আদায় করা হয়। শুধু আড়াইহাজার নয়, সারা দেশেই রয়েছে মানব পাচারকারীদের অনেক নেটওয়ার্ক। বেকার যুবকরাই সাধারণত তাদের শিকার হয়। বেসরকারি সংস্থা ওকাপ জানায়, দেশের ছয়টি জেলায় সবচেয়ে বেশি মানবপাচারের ঘটনা শনাক্ত করা গেছে। এগুলো হচ্ছেÑফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ। আর শুধু মালয়েশিয়া নয়, ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে লিবিয়ার মরুভ‚মিতে নিয়ে একইভাবে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। আর ইউরোপে যাওয়ার পথে ভ‚মধ্যসাগরে প্রতিবছর শত শত বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। সেসব দেশে গিয়েও পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলে যেতে হয়।
আমাদের তরুণ-যুবাদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।