সিলেটে খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন বুধবার

1

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটবাসীকে কাদিয়ানী ফিতনা সম্পর্কে সচেতন করতে আগামী ১৩ নভেম্বর বুধবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন ও সীরাত মাহফিল এ অংশগ্রহণের আহŸান জানিয়েছে সিলেট খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটি। রবিবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ আহবান জানান সিলেট খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাওলানা শফিকুল হক শায়খে সুরইঘাটী।
তিনি বলেন, আমরা মুসলমান। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আদর্শ। আমরা সবকিছুতে ছাড় দিতে পারলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইজ্জতের জন্য জীবন দিতে মোটেও পিছপা হবো না। আমরা কাদিয়ানীদের সাথে মুসলমান হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে বসবাস করতে আপত্তি নেই। কিন্তু তারা হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও ইয়াহুদীদের মতো পৃথক ধর্মের পরিচয়ে বসবাস করুক। তারা মুসলমান পরিচয়ে এ দেশে ভ্রান্তমতবাদ প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য, কাদিয়ানীরা অমুসলিম। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। আহমদিয়া মুসলিম জামাত কিংবা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাফের বা অমুসলিম ঘোষণা না করলে আমরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণে বাধ্য হবো।
সিলেটবাসীকে শাহজালালের উত্তরসূরী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালের ১০ এপ্রিল ‘রাবেতা আলম আল ইসলামী’ এর আহŸানে পবিত্র মক্কায় ১৪৪টি সংগঠনের তিন শতাধিক প্রতিনিধির সম্মেলনে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ‘ওআইসি’ এর উদ্যোগে ইরাকে সকল মুসলিম দেশের ধর্মমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে প্রত্যেক মুসলিম দেশে কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা দেওয়ার জন্য লিখিত প্রতিশ্রæতি নেওয়া হয়। সে মতে সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্র কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের প্রায় সমস্ত ওলামায়ে কেরামগণ তাদেরকে কাফের বলে ফতোয়া দিয়েছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত -এর ফতোয়া হচ্ছে কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের গন্ডি হতে অবশ্যই বহিভর্‚ত। কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের দুশমন। যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর প্রেরিত আখেরী নবী মানে না সে কাফের। এছাড়াও বাংলাদেশের সকল ওলামায়ে কেরামগণ কাদিয়ানীদের কাফের বলে ফতোয়া দিয়েছেন। বর্তমানে কাদিয়ানী ফেতনা সবচেয়ে বড় ফেতনা। মুসলমানদের ঈমানকে এ মুরতাদী ফেতনা থেকে রক্ষা করা এবং আমাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করতে হবে। এটি এমন একটি জিহাদ যার প্রতিদান জান্নাত।
তিনি বলেন, কাদিয়ানীরা যেহেতু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল মানে না, সেহেতু কুরআন-হাদীস এসব কিছুই মানে না! আমরা পরষ্পর শুনতে পাচ্ছি, সিলেটেও নাকি কতিপয় জায়গায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের অপতৎপরতা অতি কৌশলে গোপনে চলছে। এখানে শায়িত আছেন হজরত শাহজালাল রাহ., শাহপরান রাহ. সহ লাখ লাখ হক্কানি আলেম উলামা ও পীর মাশায়খগণ। আমরা জেনে বুঝে ঘোষণা দিচ্ছি কাদিয়ানীরা কাফের, পবিত্র এই মাটিতে, সিলেটের এ জমিনে কেউ কোনো অপতৎপরতা, বিশেষত ইসলাম, মুসলমান এবং সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ক‚টচাল কিংবা ষড়যন্ত্র করলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
মাওলানা শফিকুল হক বলেন, সিলেটবাসীকে কাদিয়ানী ফিতনা সম্পর্কে সচেতন করতে আগামী ১৩ নভেম্বর বুধবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে আমরা আয়োজন করেছি “খতমে নবুওয়াত মহাসম্মেলন ও সীরাত মাহফিল”। এই মহাসম্মেলনে অতিথি হিসেবে থাকবেন দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত উলামা-মশায়েখ। বিশেষত পাকিস্তানের বরেণ্য আলেম, মুবাল্লিগ, শায়খুল হাদীস মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান, বাংলাদেশের অন্তর্বরর্তীকালীন সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ডক্টর মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন, শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল হামিদ পীরসাহেব মধুপুর, শায়খুল হাদীস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, ডক্টর মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বরুণাসহ দেশের এবং সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় উলামা-মাশায়েখ।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর শাখার আহবায়ক অধ্যক্ষ হাফিজ মাওলানা আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা হাফিজ সৈয়দ শামীম আহমদ, খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ সালিম কাসিমী, জালালাবাদ ইমাম সমিতির সেক্রেটারি মাওলানা হুসাইন আহমদ, মাওলানা আব্দুল আহাদ, মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ খাসদবিরী, সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির প্রচার সচিব মাওলানা শাহিদ হাতিমী, মাওলানা তোফায়েল আহমদ উসমানী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ দরবস্তী, মাওলানা আসাদ মুহাম্মাদ উসামা, মাওলানা নোমান আহমদ ছালেহ, মোশাররফ হোসেন মানিক প্রমুখ।