দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

23

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। ওদিকে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অবরোধ কর্মসূচিও চলছে। ঠিক এই অবস্থায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনোযোগ রাজনৈতিক কর্মসূচির দিকে। দেশজুড়ে অভিযান চলছে। একই সময়ে দেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপরাধমূলক কর্মকাÐের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা সুখকর নয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্প্রতি জেলা পরিষদ সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন।
ভাঙচুর করা হয়েছে ৩০টি ঘরবাড়ি। গত সোমবারের এই সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান সদস্যসহ ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত মঙ্গলবার সকালে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের বাসুরচর গ্রামে বসতঘর থেকে মা ও দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের ধারণা, তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এক যুবলীগ নেতাকে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াত-বিএনপির কর্মীরা তাঁকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার সকালে নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে ঢুকে দিনে-দুপুরে এক চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করেছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।
নৌ পুলিশ সদর দপ্তরের এক জরিপের তথ্য নিয়ে গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে পানিতে ভাসমান ৩১৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৩৬০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ নিয়ে গত ২২ মাসে ৬৭৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২০ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। সে অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। এতে অনেক অপরাধী ধরা পড়ছে না বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য ও অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, হত্যার পর ঘটনা আড়াল করতে অপরাধীরা লাশ পানিতে ফেলে থাকে। বেশির ভাগ লাশ উদ্ধারের সময় পচে-গলে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। নৌ পুলিশের তথ্য বলছে, চলতি বছর নদী থেকে লাশ উদ্ধারের হার গত বছরের তুলনায় বেশি।
সারা দেশেই অপরাধী কর্মকাÐ জেঁকে বসেছে। একদিকে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে চিহ্নিত অপরাধীরা, অন্যদিকে অপরাধ করেও রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশ্রয় পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা। আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার কারণেই সমাজে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। একটি অপরাধমূলক ঘটনা ঘটার পর তার তদন্তে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। তত দিনে জন্ম নেয় নতুন নতুন অপরাধীচক্র। সংঘটিত হয় নতুন নতুন অপরাধ।
সব সমাজে সবকালেই অপরাধ ছিল এবং এখনো আছে। এর মধ্যে যেসব সমাজ বা দেশে বিচার আছে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ আছে, সেসব সমাজে অপরাধের মাত্রা খুবই কম। যখনই যে সমাজে বিচার ও নিয়ন্ত্রণের অভাব হয়, তখনই সে সমাজে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। জনজীবনের শান্তি বিঘিœত হয়।
দেশে আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসছে। এই সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ২০১৩-১৪ সালের কথা স্মরণ করতে পারি। সেবারও নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছিল। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতিও হয়। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলো অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পাঁচ বছর ধরে দেশে সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশের সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে পুরনো শক্তিগুলো নতুন করে মাঠে নামতে পারে, এমন ধারণাও কিন্তু এখন অমূলক নয়।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী দিনে আরো অবনতি ঘটবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেবে। অন্যদিকে অপরাধীচক্র আরো সক্রিয় হবে। তাই দ্রæততম সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখানে কালক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।