মাঠের কর্মসূচি মাঠেই মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি

5

 

কাজির বাজার ডেস্ক

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। নিজ দলের প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর, বিরোধী দলের অবস্থান এবং আগামী নির্বাচনের ইশতেহার তৈরিতে মগ্ন তারা।
নির্বাচনের ব্যাপারে সক্রিয়তার পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর মাঠের কর্মসূচি মাঠেই মোকাবিলা করতে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে সরব আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনের আগে ও পরে সমান তালে মাঠে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে ইশতেহার নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগে ভিসানীতি এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এটা নিয়ে বিচলিত হওয়া বা মাথা ঘামানোরও প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভিসানীতি কোনো প্রভাব ফেলবে না। ভোটের জন্য শান্তি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জনসভা আমরা করছি। আমাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক। জনরায় ও জনমত গঠন আমাদের নির্বাচনের মূল লক্ষ্য। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন এবং জনগণের সম্পৃক্ত করাই আমাদের প্রচেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা মনে করে বিএনপি-জামায়াতকে বিদেশি প্রভুরা এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে, তারা ভুল ভাবছেন। বিদেশি প্রভুরা কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন না বলে আমরা বিশ্বাস করি। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিদেশিরা এসে কাউকে ক্ষমতা বসিয়ে দেবে না, দেয় না। জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাতে পারে। আমরা সেই জনগণের কাছে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির দাবি তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপির এ দাবিকে অসাংবিধানিক বলছে। ফলে এ নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে সহিংসতারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ফলে রাজনীতির মাঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে অক্টোবর মাস। কারণ, এ মাসেই সরকারের পতন ঘটাতে চায় বিএনপি। অন্যদিকে, সরকার চায় যেকোনোভাবে আন্দোলন সামাল দিয়ে মাসটি পার করতে। নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে অবস্থান করতে চায় আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবর ও নভেম্বরে নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া, বিরোধী দলগুলোর অন্য যেকোনো কর্মসূচির দিকেও বিশেষ নজর রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির।
এরই অংশ হিসেবে অক্টোবর মাসে ক্ষমতাসীনরা বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধী সমাবেশকে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সে দিন লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতির আশা আওয়ামী লীগের নেতাদের। শুধু তা-ই নয়, চলতি মাসে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলেরও উদ্বোধন করা হবে। সে দিন শাপলা চত্বরে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল অংশ নিয়েছিল। এবার সে রকম কোনো উদ্যোগ নেই। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে আগে থেকেই বলে আসছে। তাহলে আওয়ামী লীগ কি বিএনপির জন্য বসে থাকবে? হয়তো অনেকেই ভাবছেন, বিএনপি না আসলে নির্বাচন হবে না। যারা এটা ভাবছেন, তারা ভুলের মধ্যে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সঠিক সময়ে নির্বাচন করে ফেলবে। কে আসল, কে আসল না, সেটা দেখবে না। বর্তমানে সেভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। বিএনপি অংশ নিলে নির্বাচন হবে এক রকম, না এলে নির্বাচন হবে অন্য রকম। বিএনপি না আসলে জোট আর মহাজোটের দলগুলো এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। নতুন নিবন্ধিত দলগুলোও নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমÐলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে সেটা মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি নিজেও প্রার্থী, মাঠে যাচ্ছি। তৃণমূলে নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে আতঙ্ক আছে। তৃণমূলের মানুষদেরও নির্বাচন যে সঠিক সময়ের মধ্যে হবে সেটা বোঝাতে হচ্ছে। আমরা তাদের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছি। মানুষকে শেখ হাসিনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাচ্ছি। গত ১৫ বছরের উন্নয়নের চিত্র মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা সবসময় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আছি। আওয়ামী লীগ একের পর এক নির্বাচনের মধ্যেই থাকে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মধ্যেই আছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলার নেতা, জেলা থেকে কেন্দ্রের নেতা, সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।’
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো রকম সহিংসতা করার সুযোগ নেই- জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তারা সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না, তারা সংবিধান মানে না। যারা নির্বাচনে আসে না তারা কীভাবে শক্তিশালী বিরোধী দল? এরা তো ভোটেই বিশ্বাস করে না; কীভাবে শক্তিশালী বিরোধী দল হয়?
এদিকে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতিমÐলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে চেয়ারম্যান এবং তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে কমিটিতে। এ ছাড়া, কমিটিতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বিশেষজ্ঞদেরও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ইশতেহার তৈরিতে সাধারণ মানুষের মতামতও চেয়েছে দলটি। চলতি মাসের মধ্যে ইশতেহার চ‚ড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা।