মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

52

কাজির বাজার ডেস্ক

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নর্মাল স্যালাইন ও গেøাকোজ স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) আইভি ফ্লুইড কেনার অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ পিস আইভি ফ্লুইড সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বুধবার এই আইভি ফ্লুইড সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার অনুমোদন চাইবে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় জরুরি পরিস্থিতিতে ১২ লাখ পিস নর্মাল স্যালাইন (এক হাজার এমএল) ও ৮ লাখ পিস গেøাকোজ স্যালাইনসহ (এক হাজার এমএল) মোট ২০ লাখ পিস আইভি ফ্লুইড সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হবে। সূত্রটি জানিয়েছে, এই আইভি ফ্লুইড কেনার অনুমোদন পাওয়া গেলে বর্তমানে স্যালাইনের যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। প্রয়োজন হলে সামনে আরও স্যালাইন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই ২০ লাখ আইভি ফ্লুইড কিনতে ২৯ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)-এর মাধ্যমে এই আইভি ফ্লুইড কেনা হবে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৫ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৪ হাজার ৯৭৬ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৯৮ হাজার ৮১৯ জন ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৪৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৭৮ জন ও ঢাকার বাইরের ২৬৮ জন। এবছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন এক লাখ ৬২ হাজার ৮৪৭ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭০ হাজার ৫৮৪ জন ও ঢাকার বাইরের ৯২ হাজার ২৬৩ জন।
বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ হাজার ১০২ জন ডেঙ্গুরোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৮১৪ জন ও ঢাকার বাইরে রয়েছেন ৬ হাজার ২৮৮ জন। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। অন্যান্য বছর ডেঙ্গু অনেকটাই ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু এবার পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এরইমধ্যে স্যালাইনের এক ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে জরুরি পরিস্থিতিতে ২০ লাখ আইভি ফ্লুইড সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান বলেন, স্যালাইন ওই ভাবে সংকট নেই। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২০ লাখ পিস আইভি ফ্লুইড কেনার প্রস্তাব চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার সঠিক জানা নেই। তবে এখন তো একটি বিশেষ পরিস্থিতি। সময় কাভার না করার কারণে হয়তো এটি (সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আইভি ফ্লুইড কেনার উদ্যোগ) করা হচ্ছে। এদিকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর ৬৮(১) অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে ও পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) এ উল্লিখিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে ক্রয়ের জন্য চট্টগ্রাম সাইলোর বিএমআরই (ব্যালেন্সিং, আধুনিকায়ন, বিস্তার এবং প্রতিস্থাপন) করার নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হতে পারে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কনসোটিয়াম অব পার্ক বাংলাদেশ ও সামিট করপোরেশন কর্তৃক বেসরকারিখাতে দিনাজপুর জেলার বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকায় ২০০ মেগাওয়াট (এসি) সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষে ট্যারিফ অনুমোদনের প্রস্তাব নিয়ে আসবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তেল কেনার দুটি প্রস্তাব নিয়ে আসা হতে পারে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব থাকবে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত জরুরি দরপত্র পদ্ধতিতে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা। আর একটি প্রস্তাব থাকবে স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৬৫ লাখ লিটার তেল কেনার। এই দুটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিতে পারে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সার কেনার দুটি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সার কেনার তিনটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব দেবে। সেই সঙ্গে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো)-এর নিকট থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব দেওয়া হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই সার কেনার অনুমোদন দিতে পারে।
অপরদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি, কানাডা থেকে দুটি লটে ৫০ হাজার মেট্রিক টন করে ১ লাখ মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানির অনুমোদন চাওয়া হবে। মন্ত্রিসভা কমিটি বাচাই-বাছাই করে এই সার কেনার অনুমোদন দিতে পারে।
এছাড়া নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় ইটাখোলা-মাঠখোলা-কটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া-আড়াইহাজার-নরসিংদী-রায়পুরা দুটি আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের আওতায় বেশকিছু ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।