সিলেটে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে রোগী, ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জে

18
স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। শহরের পর এবার ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলেও। চলতি মওসুমে জানুয়ারী থেকে গতকাল ২৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সিলেটে মৃত্যু না হলেও আক্রান্ত ৩১৩ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরো ২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বর্তমানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাসা-বাড়ীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭৮ জন ডেঙ্গুরোগী। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. ভাস্কর ভট্টাচার্য তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সিলেটের গোয়াইনঘাটে কয়েকদিন আগে ডেঙ্গুরোগী হট স্পট হিসেবে চিহিৃত করা হলেও বর্তমানে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলাকে চিহিৃত করা হয়েছে। গোয়াইনঘাটে গাড়ির টায়ারে পানি জমে থাকার কারনে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যায়। এতে ঐ এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি সনাক্ত হয়। বর্তমানে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বেশকিছু গার্মেন্স শ্রমিক অসুস্থ হয়ে ঢাকা থেকে চলে আসেন নিজ এলাকায়। অসুস্থ প্রায় সকলই ডেঙ্গুরোগী। তথ্য বিশ্লেষন করা দেখা গেছে এখন সিলেট অঞ্চলের অনেক গ্রামেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এদের অধিকাংশ রাজধানী ফেরত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সুত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ৩১৩ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে ২৩৫ জন ইতোমধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে ৭৮ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে সিলেটে ১০ জন, সুনামগঞ্জে ৫ জন, হবিগঞ্জে ৪৪ জন ও মৌলভীবাজারে ২ জন ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধিন রয়েছেন।
চলতি মৌসুমের মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটে শনাক্ত হওয়া ৩১৩ ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে সিলেট জেলার ১৮৩ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ১৯ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৯৬ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ১৫ জন রয়েছেন।
এদিকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নির্মূলে বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পাশাপাশি চলছে অভিযান। যেখানেই এডিস মশার লার্ভা মিলছে সেখানেই চলছে জরিমানা। মঙ্গলবার সকাল থেকে একযোগে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত নামেছে অভিযানে। কয়েকটি জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় করা হয়েছে মোটা অঙ্কের জরিমানা। অভিযানে মহানগরীর ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের পাঠানপাড়া এলাকায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নগরীর ৭, ১০ ও ২৬ নং ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমার বাস টার্মিনাল ও কদমতলী এলাকায় বেশি পাওয়া গেছে। তিনি জানান, গত জুন মাসে ১০টি স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হলে ২-৩টি স্থানে এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন ১০টি স্থানের নমুনা পরীক্ষা করলে ৫-৬ জায়গায় এডিসের লার্ভা সনাক্ত হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে এডিস মশার বিস্তৃতি ঘটছে। তাই মানুষকে সচেতন করা না গেলে ডেঙ্গুর কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত হুমায়ূন রশীদ চত্তর থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ রোড পাঠান পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় মহানগরীর ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের চারটি প্রতিষ্ঠান এবং একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে এডিশ মশার লার্ভা পাওয়া যায়। চারটি প্রতিষ্ঠানের সবগুলো হচ্ছে গাড়ির গ্যারেজ। এই চার প্রতিষ্ঠানকে মোট ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর বাড়ির মালিককে সতর্ক করা হয়। এছাড়া এসব লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে।