গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি সুনামগঞ্জে ২০ লাখ মানুষ বন্যা আতঙ্কে

12

স্টাফ রিপোর্টার

কয়েক দিনের ঢানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়েছে বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গত ১৪ জুন ভোর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। এতে নগরীর নিম্নাঞ্চাল এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সিলেটের উজানে ভারতের আসামেও ভারী বৃষ্টির কারণে সেখানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও সিলেটে টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সোমবার (১৯ জুন) বিকেল ৩টায় সুরমার পানি বিপৎসীমার ১৩ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা হচ্ছে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। গত ২১ ঘণ্টায় কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৭ সেন্টিমিটার।
এছাড়া সিলেট সদর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। সুরমা নদীর সিলেট সদর পয়েন্টে বিকেল ৩টায় পানি বিপৎসীমার ১০ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা হচ্ছে ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। গত ২১ ঘণ্টায় সদর পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৩ সেন্টিমিটার। এছাড়া পানি বেড়েছে সিলেটের কুশিয়ারা, ধলাই, লোভা ও সারী নদীতে।
সোমবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বর্ষণের ফলে নগরের মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, আখালিয়ায় নতুন বাজার, সুবিদবাজারের নুরানী, ছড়ারপাড়সহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকায় সড়কে হাঁটুপানি দেখা গেছে। জলাবদ্ধতায় বিভিন্ন এলাকার সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চলাচলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশি।
আখালিয়া এলাকার শাহীন আহমদ জানান, শেষ রাতে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আখালিয়া নয়াবাজার সড়কে পানি, বাসার সামনে পানি। মানুষ কষ্টে আছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রæতগতিতে এই পানি নেমে যাবে। সিটি করপোরেশনের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন বলেন, ভোর থেকে শুরু করে বেলা ১১টা পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১২ আর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া সারাদিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় স্থানীয় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। হাওরাঞ্চলে বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন পনিবন্দী। গত মঙ্গলবার ১৩ জুন ভোর থেকে থেকে টানা স্থানীয় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা যেন তীলে তীলে গ্রাস করছে সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাটকে। অতিবৃষ্টির কারণে উপজেলাবাসীর মাঝে বাড়ছে বন্যার আতংক।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার উনাই হাওরে নির্মানাধীন ব্রিজ, বঙ্গবীর ট্রানিং ও তোয়াকুল ব্রীজ নির্মানে ধীরগতি থাকায় তোয়াকুল, নন্দিরগাঁও রুস্তমপুর, পশ্চিম জাফলং, সদর, পূর্ব জাফলং ও মধ্য জাফলং ইউপির সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়াও গোয়াইনঘাট রাধানগর রাস্তার এক তৃতীয়াংশ বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার কারণে জরুরি কাজে উপজেলা সদরে আসতে কেউ কেউ ইঞ্জিন নৌকা ব্যবহার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ইউনিয়নের হাওরাঞ্চলের হাজারও মানুষ রয়েছেন পানি বন্দী। এছাড়াও উনাই হাওরে বাইপাশ সড়ক নিমজ্জিত থাকায় ঐ এলাকার বাজার গুলোতে নিত্য পণ্যে সরবরাহে বিঘিœত ঘটছে। ফলে জনসাধারণের দূর্ভোগ চরমে। একদিকে পানিবন্দী অন্যদিকে মানুষের কর্মসংস্থান না থাকায় দিনমজুর শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছেন ফলে কাটছে মানবেতর দিন। হাওর বেষ্টিত গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে গোচারণ ভ‚মি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবার তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে রয়েছেন শংঙ্কায়। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বিপদের শংঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
উপজেলা ত্রান ও দূর্যোগ শাখার কর্মকর্তা (পিআইও) শীর্ষেন্দূ পুরকাস্থ বলেন, সরকার প্রদত্ত আমাদের পর্যাপ্ত ত্রান রয়েছে, উপজেলা জুড়ে ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিপুল সংখ্যক উদ্ধারকারী (রেসকিউ) টিম রয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধিদের জরুরি বার্তা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা আছে। তবে গেল বছরের ভয়াবহ বন্যার আতংকে এ বছরও শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।
সুনামগঞ্জে বন্যা আতঙ্কে ২০ লাখ মানুষ
সময়টা যেন একদম ভালো যাচ্ছে না সুনামগঞ্জবাসীর। অঝরে ঝরে চলেছে বৃষ্টি। থামার যেন কোনো লক্ষণ নেই। আরও দুই-তিন দিন এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে বন্যার কবলে পড়বে সুনামগঞ্জের ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী নিম্নাঞ্চলে এরইমধ্যে ঢলের পানি ঢোকায় ও সব ধরনের রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। এমনকি অনেকেই এরইমধ্যে বসতভিটার সব আসবাবপত্র নৌকায় করে উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, নদীর পানি বাড়ায় প্রতিনিয়ত আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দা পেয়ারা বেগম বলেন, গত বছর বন্যার পানিতে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেজন্য এ বছর পানি পুরোপুরি আসার আগে ঘরের আসবাবপত্র নৌকায় করে উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দা ফজু আহমেদ বলেন, যেভাবে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে আমরা খুব আতঙ্কে আছি।
তবে স্বস্তির বাণী শোনাতে পারেননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।