মাগুরছড়া দিবস আজ : ২৬ বছরে আদায় হয়নি ক্ষতিপুরণ

20

কাজির বাজার ডেস্ক

আজ ১৪ জুন মাগুরছাড়া দিবস। মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণের ২৬ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে এখন পর্যন্ত স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক আদালতে কোন মামলা করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনায় গ্যাস উবে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়ার ক্ষতিপূরণও আদায় হয়নি।
১৯৯৭ সালের এই দিনে মধ্যরাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকার মাগুরছড়ায় গ্যাসক‚প খনন করার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এতে পুড়ে যায় হাজার কোটি টাকার গ্যাস। পুড়ে যায় আশপাশের বনাঞ্চল, রেল লাইন, সড়কপথ, ঘর-বাড়ি, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকা। কিন্তু সেই পুড়ে যাওয়া মূল্যবান গ্যাস ও পরিবেশের দায় কার তা আজও ঠিক করা যায়নি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি সে সময় জানিয়েছিল, গ্যাস ও আশপাশের পরিবেশ মিলে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যা টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিষ্ফোরনের প্রায় দ্বিগুণ। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাগুরছড়া থেকে উত্তোলনযোগ্য ২৪৫ দশমিক ৮৬ বিসিএফ গ্যাস উবে গেছে। যার সে সময়ের বাজার দাম তিন হাজার ৮৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে কেউ কেউ মনে করেন মজুদ থাকা ৪৮৫ দশমিক ৮৬ বিসিএফ গ্যাসের পুরোটা উবে গেছে।
গ্যাসক্ষেত্রের আশপাশে ছোট-বড় প্রায় ৪০টি চা বাগানের ক্ষতি হয়েছিল। অর্থের পরিমানে যার মূল্য ধরা হয় প্রায় ৪৬ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৮৩০ টাকা। বনাঞ্চলের মোট ক্ষতি ধরা হয় ৯ হাজার ৮৫৮ কোটি ৩১ লাখ। এ ভয়াল ঘটনায় দুই হাজার ফুট রেল লাইন পুড়ে যায়। যার দাম ধরা হয় ৮১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা। সড়কপথ নষ্ট হওয়ার জন্য ২১ কোটি, গ্যাস পাইপলাইন পোড়ার জন্য ১৩ লাখ, বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতির জন্য এক কোটি ৩৫ লাখ নয় হাজার ১৮৬, খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পান বাগান পুড়ে যাওয়ায় ১৮ লাখ, বাসমালিকদের রাজস্বক্ষতি ১২ লাখ টাকা হয়েছিল বলে কমিটি জানিয়েছিল। মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল এই গ্যাসক‚প খনন করছিল। ক‚পের ৮৫০ ফুট গভীরে পৌঁছালে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনে উদ্যানের গাছপালা, মাগুরছড়া পানপুঞ্জি, ফুলবাড়ী চা-বাগানের একাংশ, ঢাকা-সিলেট রেললাইন, ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কপথ, বিদ্যুৎ লাইনসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। এদিকে মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে ১৪ জুন জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি ও পাহাড় রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটি ও কমলগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসুচী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বিকেলে জানান, মাগুরছড়া ট্রাজেডির বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা খুব দুঃখজনক ঘটনা। আমি এ জেলায় নতুন যোগদান করেছি। খোজ নিয়ে কিভাবে ক্ষতিপূরন আদায় করা যায় সেই চেষ্ঠা চালিয়ে যাবো।