প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ নির্দেশনা

17

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার গণভবনে অনুষ্ঠিত বাজেট সংক্রান্ত বৈঠকে বৈশ্বিক সংকটের মুখে কৃচ্ছ্রসাধনসহ পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্য নির্দেশনাগুলো হলো-বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বাড়াতে মনিটরিং করা; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা; হুন্ডি প্রতিরোধ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ানো এবং গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী আগামী দিনগুলোতে আরও কঠোরভাবে কৃচ্ছ্রসাধন করতে বলেছেন বলে জানা যায়। বিশেষ করে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়ার কথা বলেছেন। অর্থনীতির এ সংকট মুহ‚র্তে সব ধরনের বাহুল্য ব্যয় পরিহারের এসব নির্দেশনাকে সময়োপযোগী মনে করি আমরা।
বৈশ্বিক সংকটের কারণে সরকারের আয় কমেছে এবং ব্যয় বেড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে এর বিরূপ প্রভাব; বিশেষত রেমিট্যান্সপ্রবাহ ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এর বড় প্রভাব পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দাভাব। এ পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব আয় ভালো নয়। এ অবস্থায় সরকার অর্থের অপচয় ও অপব্যবহার বন্ধ করার পদক্ষেপ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। পাশাপাশি রোধ করতে হবে দুর্নীতিও। দুর্নীতি আমাদের অন্যতম বড় সমস্যা। এটি কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে অপচয় রোধেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। কারণ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে সরকারের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়ে যায়। বিশেষ করে আর্থিক খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অর্থ পাচার রোধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।
বস্তুত সংকট মোখাবিলায় সব ক্ষেত্রেই সাশ্রয়ী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির প্রয়োজন হয়, সেগুলো বাস্তবায়নে এ মুহ‚র্তে ব্যয় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়াই সমীচীন। তবে যেসব প্রকল্প চলমান থাকবে, সেসব প্রকল্প যেন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সম্পন্ন হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। দেশে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়, তৈরি হয় দুর্নীতির সুযোগ। কোনো প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা গেলে অনাবশ্যক ব্যয় যেমন হ্রাস পায়, তেমনি হ্রাস পায় জনদুর্ভোগও। কাজেই প্রকল্পে ধীরগতি, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন না হওয়া, বাড়তি সময় নেওয়া-এ প্রবণতা রোধ করতে হবে কঠোরভাবে। তাছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ সফরের কারণে অর্থের অপচয়ের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন প্রকল্পে ঘাস চাষ, খিচুড়ি রান্না, পুকুর খনন, মৎস্য চাষ প্রযুক্তি হস্তান্তর, কাজুবাদাম চাষ ইত্যাদি শিখতে বিদেশ সফরের প্রস্তাব ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রকল্পের অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা যেন অহেতুক বিদেশ সফর না করেন, সে বিষয়ে ইতঃপূর্বেও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরও দুর্ভাগ্যজনকভাবে একের পর এক প্রকল্পে অপচয়ের খবর মিলেছে। তাই উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করি আমরা। দেশের তথা সারা বিশ্বের এই ক্রান্তিকালে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকার ব্যয় সংকোচনের নীতি অব্যাহত রাখবে, এটাই কাম্য।