জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন জরুরি

3

জঙ্গিবাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের মানুষের। একযোগে সারা দেশে পাঁচ শতাধিক বোমা হামলা, আদালতে হামলা, সিনেমা হল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, মাজারে হামলা, মানুষ মেরে উল্টো করে গাছে ঝুলিয়ে রাখাÑএমন আরো কত নৃশংসতা দেখেছে দেশের মানুষ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর নিরলস প্রচেষ্টায় জঙ্গি তৎপরতা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আবারও তারা নানাভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। কিশোর-তরুণদের ভুল বুঝিয়ে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করতে চাইছে। তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত কয়েক মাসে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশে শতাধিক ব্যক্তির ঘর ছাড়ার ঘটনায়। তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি প্রশিক্ষণের সময়। কেউ কেউ ভুল বুঝতে পেরে নিজেরাই ফিরে এসেছে। কারো কারো এখন পর্যন্ত কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। গত ১০ অক্টোবর নিখোঁজ ৩৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল র‌্যাব। এখনো সেই তালিকার ৩২ জনেরই কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হলে জঙ্গিরা আবারও মাঠে নামতে পারে। সে উপলক্ষেই তারা দল গোছাচ্ছে এবং হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তারের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের সংশ্লিষ্টতা নানাভাবেই উঠে এসেছে। দেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেয় নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনের চেষ্টা করে, কিন্তু সফল হয়নি। ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদীরা প্রায় প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করে। রাজশাহীতে দিনের বেলা কয়েক হাজার সদস্য নিয়ে জেএমবি ট্রাক মিছিল করে। সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে গ্রেনেড ও বন্দুক হামলা চালানো হয়। পরবর্তী হসপড গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিরা সেই হামলার পরিকল্পনা, গ্রেনেড সরবরাহসহ অনেক তথ্যই দিয়েছে পুলিশকে। আদালত পর্যন্ত রক্ষা পায়নি জঙ্গি হামলা থেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদ দমনে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে জঙ্গি তৎপরতা কমলেও তা যে বন্ধ হয়নি তা এই হিজরতসহ আরো অনেক ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়। এসব ঘটনায় জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীর জড়িত থাকার তথ্যও উঠে আসছে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
নিখোঁজ কিশোর-তরুণদের পরিবারে আজ হাহাকার চলছে। অনেকেই তাঁদের সন্তানদের যারা বিপথগামী করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। যারা তরুণদের নিরুদ্দেশ হতে উদ্বুদ্ধ করেছে কিংবা প্রশিক্ষণ দিয়েছে এমন অনেককে এরই মধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবারেরও কিছু দায় থেকে যায়। সন্তানের নিরুদ্দেশ হওয়া কিংবা রহস্যজনক আচরণের তথ্য পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হলেও অনেক পরিবার থেকে তা করা হয়নি। তা সত্ত্বেও এখনো যারা নিরুদ্দেশ রয়েছে দ্রুত তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যারা সুপথে ফিরতে চায় তাদের ফেরার সুযোগ দিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি নিকট-ভবিষ্যতে সবার সহযোগিতায় আমরা দেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে সক্ষম হব।