জীববৈচিত্র্য রক্ষা

6

শীতের সময় সাইবেরিয়াসহ উত্তরাঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখি দক্ষিণের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। বাংলাদেশেও আসে। অন্যান্য দেশে পরিযায়ী পাখি মোটামুটি নিরাপদে থাকলেও বাংলাদেশে তা হয় না। অন্যান্য দেশে পরিযায়ী পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই বললেই চলে।
আর এই সুযোগটা কাজে লাগায় চোরা শিকারিরা। বাংলাদেশে আসা পরিযায়ী পাখির একটি বড় অংশই হচ্ছে হাঁসজাতীয় জলচর পাখি। বিল, হাওর বা জলাভূমিতে এরা নেমে আসে। শিকারিরা মাইলের পর মাইল সরু সুতার ফাঁসজাল পেতে রাখে। হাঁসগুলো তাতে আটকে যায়। আবার বিষটোপ দিয়েও হাঁসগুলোকে আধমরা করে ধরে ফেলে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, হাকালুকি হাওরে ফাঁদ পেতে ও বিষটোপ দিয়ে দেদার পাখি ধরা হচ্ছে। প্রকাশ্যেই চলছে সেসব পাখির কেনাবেচা। শিকারিরা পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরেও পাখি বিক্রি করছে।
হাকালুকি হাওর শুধু বাংলাদেশের নয়, এশিয়ার বৃহত্তম স্বাদু পানির জলাশয়। মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলায় এই হাওরটির অবস্থান। ২০ হাজার ৪০০ হেক্টরের এই হাওরে মোট ২৩৮টি বিল রয়েছে। ১০টি নদীর সঙ্গে এর সংযোগ রয়েছে। জীববৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই হাওরটিতে স্থানীয় ও পরিযায়ী মিলে ৪১৭ প্রজাতির পাখির আবাস ও বিচরণ রয়েছে। রয়েছে অন্যান্য জলজ প্রাণীও। হাওরটিকে আন্তর্জাতিক রামসর এলাকা হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। সেই হাওরটির জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস রোধে আমাদের এত অবহেলা কেন? প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুধু পরিযায়ী পাখি নয়, আশপাশে থাকা হাঁসের খামারের হাঁসগুলোও এসব ফাঁদ ও বিষটোপে মারা পড়ছে। অন্যান্য জলজ প্রাণীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিবেশ বা জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে আমরা যত কথা বলি, বাস্তবে আমরা তার প্রায় কিছুই পালন করি না। হাকালুকি নিয়ে প্রকাশিত খবরটি তারই প্রতিফলন। আমাদের দেশে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন রয়েছে। সে আইনে এসব পাখি ধরা বা শিকার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর ওপর সেই আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব রয়েছে। এর পরও কিভাবে নির্বিচারে পাখি শিকার করা হয় এবং অবাধে কেনাবেচা চলে? শুধু হাকালুকি হাওর নয়, অন্যান্য হাওর-বিলেও অবাধে পাখি শিকার করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়। শীতের সময় দক্ষিণাঞ্চলেও পাখি শিকারের উৎসব লেগে যায়।
দেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। হাকালুকি হাওরে পাখি শিকার বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। শিকার ও কেনাবেচার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।