সেন্ট মার্টিন রক্ষায় উদ্যোগে

6

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। নীল সাগরের বুকে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই ছোট্ট দ্বীপটি। কিন্তু সেই সৌন্দর্য ক্রমেই ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ঘনবসতির পাশাপাশি পর্যটকের চাপ, প্লাস্টিক ও পরিবেশদূষণ, মানুষের অসচেতনতা এবং সেখানে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোর অত্যাচারে দ্বীপের অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে চলে এসেছে।
এই অবস্থায় বন ও পরিবেশসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সাম্প্রতিক সময়ের বৈঠকে দ্বীপের পরিবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই দ্বীপের পরিবেশদূষণের সঙ্গে জড়িত ১৬৬টি প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে জরিমানাও করা হয়েছে। দ্বীপের পরিবেশ উন্নয়নে সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বীপের পরিবেশদূষণ মোটেও কমেনি।
দেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে সমুদ্রের বুকে এক ছোট্ট দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। বর্তমানে দ্বীপটিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে। এখানে অতি সমৃদ্ধ একটি জীববৈচিত্র্য রয়েছে। জানা যায়, গত পর্যটন মৌসুমের পাঁচ মাসে (নভেম্বর থেকে মার্চ) দ্বীপটিতে প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছে। দ্বীপটিতে শতাধিক হোটেল ও মোটেল গড়ে উঠেছে। এগুলোর পয়োবর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য কোনোটিরই সঠিক ব্যবস্থাপনা হয় না। এসব বর্জ্যরে অবশ্যম্ভাবী গন্তব্য হয় সাগর। এখানে যে প্রাকৃতিক পাথর রয়েছে সেগুলো উত্তোলন করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকদের মধ্যেও সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দ্বীপজুড়েই যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যরে স্তুপ জমে থাকতে দেখা যায়। দ্বীপে থাকা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে অনেক প্লাস্টিক ও পলিথিনের সামগ্রী দেখা যায়। রাস্তাঘাটে, মাঠে প্লাস্টিকের পানির বোতল, কোমলপানীয় ও জুসের বোতল, চিপস, আচার, বিস্কুটের খালি প্যাকেট, একবার ব্যবহারযোগ্য গ্লাস, কাপ-পিরিচ, পলিথিনের ব্যাগসহ নানা অপচনশীল দ্রব্য যত্রতত্র চোখে পড়ে। এগুলো বর্ষার সময় ধুয়ে সাগরে চলে যায়। এসব প্লাস্টিক খেয়ে অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত শব্দদূষণও দ্বীপটিতে প্রাণীদের আবাসযোগ্যতা নষ্ট করছে।
১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল দ্বীপটিকে ‘পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালে ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও অনেক কিছু নিষিদ্ধ করা আছে। কিন্তু পরিবেশ আন্দোলনকারীদের মতে, সেসব ঘোষণা বা আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কোনো দপ্তরেরই কার্যকর উদ্যোগ নেই। জানা যায়, সংসদীয় কমিটিও এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আমরা চাই বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিকে রক্ষায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।