বিশ্বকাপে অমূল্য রতেœর খোঁজে ওরা

11

স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে ৩২ দেশ। সবারই লক্ষ্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তবে চার বছরের জন্য মুকুট মাথায় করে রাখার তালিকায় মেসি-রোনালদো-নেইমার-বেনজেমাদের দেশ অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। এরই মধ্যে কাতারে আসতে শুরু করেছে সবাই। কাতারে এখন শক্তির পার্থক্য দেখানোর ক্ষণগননা শুধু। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মহানায়ক হবেন কে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
সময় হিসাব করলে ট্রফির অন্যতম বড় দাবিদার লিওনেল মেসি। বলা হচ্ছে, এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। ৩৫ বছর বয়সে কম তো কারিকুরি দেখানো হলো না। এবার কাতারে তপ্ত মরুভূমিতে সুন্দর ফুটবল ফুটিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার পালা। একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে ক্লাব ফুটবলে এহেন কোনও টুর্নামেন্ট নেই তিনি জেতেননি। ব্যালন ডি’অর জিতেছেন সাতবার। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত তার দেশ আর্জেন্টিনা। সবশেষ ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জিতে অনন্য অবস্থানে আছেন।
তাই বিশ্বকাপ জিতে কোটি সমর্থককে আনন্দে ভাসাবেন মেসি- এমন প্রত্যাশা আর্জেন্টাইনদের। আগামী ২২ নভেম্বর যাত্রা হচ্ছে আলবিসেলেস্তেদের। দোহাতে আর্জেন্টিনার যেমন সমর্থক রয়েছে, ঠিক তেমনি ব্রাজিলের কম নয়। তাই তো মেসির মতো আরেক বড় তারকা নেইমারকে ঘিরে প্রত্যাশার চাপ অনেক। শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশনে নামার অপেক্ষায় থাকা ব্রাজিল এবার যে করেই হোক ট্রফি জিতে দেশে ফিরতে চাইছে।
মেসির মতো প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ের হয়ে দারুণ ফর্মে আছে নেইমার। ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হওয়া নেইমার জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত গোল করেছেন ৭৫টি। কিংবদন্তি পেলের ৭৭ গোলের রেকর্ড ছাপিয়ে শীর্ষে যাওয়ার মোক্ষম সময় তো এখনই। এছাড়া কাতারেই শেষ বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে ধরে নিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকার সুযোগ নিশ্চিত করে হাতছাড়া করতে চাইবেন না নেইমার।
দুই তারকার সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ৩৭ বছর বয়সী তারকার যে কাতার বিশ্বকাপেই যে শেষ দেখতে হবে তা কিছুটা হলেও অনুমেয়। অথচ জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বিশ্বের তিন তারকার মধ্যে একজন থেকে এখনও যে বিশ্বকাপের ট্রফি ছোঁয়া হয়নি! যেমনটি হয়নি মেসি ও নেইমারেরও।
২০১৬ সালের ইউরোতে পর্তুগালকে কেউ ফেভারিট ভাবেনি। ঠিকই রোনালদোর দল শিরোপা জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তবে কাতার বিশ্বকাপ ভিন্ন প্রেক্ষাপট। ভিন্ন আবহে লড়াই। সেখানে ৪০ বছর বয়সী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকার দিকে দৃষ্টি থাকবে সবার।
যেখানে রোনালদো আছেন সেখানে দল বাড়তি রসদ পাবে এগিয়ে যাওয়ার। তবে এটা ২০১৬ কিংবা ২০১৮ নয়। ২০২২-এর রোনালদো যে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ম্যান ইউতে তার সময়কাল মোটেও ভালো যাচ্ছে না। ঠিকমতো একাদশে জায়গা হচ্ছে না। এ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে হইচই ফেলে দিয়েছেন। তবে যাই হোক না কেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকার দলে থাকা মানে বাড়তি উন্মাদনা। মাঠে থাকা মানে বাড়তি মনোযোগ নিজের দিকে টেনে আনা। তাই পর্তুগাল যদি কিছু একটা করে দেখাতে পারে তাহলে রোনালদোর জন্যই সুখকর হবে।
জার্মানির জন্য ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। ইতালি ও ব্রাজিলের মতো টানা দুইবারের বিশ্বকাপ জয়ী দল। ২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যদিও আর ফাইনাল খেলতে পারেনি। সেই বিশ্বকাপ তো এখনও কাঁদায় আর্জেন্টাইনদের। ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হতে হয়েছিল। যার জন্য মেসিদের যন্ত্রণায় পুড়তে হয়েছে, তিনি মারিও গোটশে। ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি করেছিলেন তিনিই।
সেই বিশ্বকাপের পর সর্বশেষ ২০১৭ সালে জার্মানির হয়ে খেলেছিলেন। এরপর আর তাকে জার্মান দলে দেখা যায়নি। ৫ বছর পর এই মিডফিল্ডারকে নিয়েই কাতার বিশ্বকাপে এসেছে জার্মানি। চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন মানুয়েল নয়ার ও থমাস মুলার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স তো বড় দাবিদার। দিদিয়ের দেশম দলকে একসুতোয় বাঁধতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে এবার দেখা যাবে দলের আরেক বড় তারকা করিম বেনজেমাকে। রিয়াল তারকা প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতে দারুণ ফর্মে আছেন। তাই ট্রফি নিজেদের ঘরে রেখে দিতে পারলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এছাড়া হ্যারি কেইনের ইংল্যান্ড, পেদ্রি-আনসু ফাতিদের স্পেন, কেভিন ডি ব্রুইনার বেলজিয়াম কিংবা ভার্জিল ফন ডাইক-ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের নেদারল্যান্ডসও শিরোপার অন্যতম দাবিদার।
অমূল্য রতেœর বিশেষ মর্যাদা পেয়ে যাওয়া এই বিশ্বকাপ ট্রফি আসলে পেতে পারে যে কেউ। ৩২টি থেকে একটি দেশ! সেই সৌভাগ্যবান কারা?