পোলট্রি পণ্যের দাম

9

বাজারে পোলট্রি পণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। গরিবের পুষ্টি চাহিদার বড় জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত ডিম এখন তাদের নাগালের বাইরে। ডিমের হালি এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।
তার পরও পোলট্রি ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা টিকতে পারছেন না। গত ছয় মাসে দেশে পোলট্রি খামার কমেছে ১০ হাজারের বেশি। এর জন্য খামারিরা মূলত দায়ী করছেন বিদ্যুতের লোড শেডিং, পোলট্রি খাদ্যের উচ্চমূল্য এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে।
সারা দেশে বেকার যুবকদের আয়ের একটি বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ছোট আকারের পোলট্রি ফার্ম। দ্রুত বাড়ছিল সেই সংখ্যা। ছয় মাস আগেও দেশে পোলট্রি ফার্মের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০ হাজার। সেই সংখ্যা এখন ৮০ হাজারের নিচে নেমে গেছে। পোলট্রি খামারিদের মতে, পোলট্রি খাদ্য ও ওষুধের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। এত বেশি দামে খাদ্য ও ওষুধ কিনে লাভ করা যাচ্ছে না। দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। তার ওপর আছে এলাকাবিশেষে আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোড শেডিং। মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা তৈরির জন্য ইনকিউবেটরসহ ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে তা পারা যায় না। ফলে বাচ্চার উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। আবার ছোট খামারিদের পক্ষে বাচ্চা পালন করাও সম্ভব হচ্ছে না। বাচ্চাকে ২৪ ঘণ্টাই বৈদ্যুতিক আলোতে তাপের মধ্যে রাখতে হয়। লোড শেডিংয়ের কারণে ছোট খামারিরা এখন বাচ্চা কিনতেও ভয় পাচ্ছেন। অতিরিক্ত গরমে বড় মুরগিও মারা যাচ্ছে। ছোট বা মাঝারি খামারিদের পক্ষে জেনারেটর দিয়ে ফার্ম পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জেনারেটর চালানোও লাভজনক নয়। পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন পোলট্রি খাবারের চাহিদা রয়েছে এবং তার প্রায় পুরোটাই দেশীয় ফিড মিলগুলো থেকে আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গমসহ ফিডের কাঁচামালের দামও বেড়ে গেছে। চাপ রয়েছে ডলারের দাম বাড়ার কারণেও। আবার লোড শেডিংয়ের কারণে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। তাই পোলট্রি খাদ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে।
দেশে পোলট্রিশিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছিল। ডিম ও মুরগির মাংসের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ভালোভাবেই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল। এই খাতটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের আমদানির তালিকা আরেকটু স্ফীত হবে। দেশের স্বার্থে সেটি কোনোভাবেই কাম্য হবে না। তাই পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে সংকট উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে। কম সুদে ঋণ প্রদান করে তাদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি কম মূল্যে সোলার প্যানেল বা বিকল্প বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আমরা চাই, সাময়িক সংকট থেকে পোলট্রিশিল্পকে রক্ষা করতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হোক।