কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা ॥ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে দুদক

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুদকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিলের উদ্দেশে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে দুদক।
প্রতিবেদনটির মাধ্যমে দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ এবং বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া এই তথ্য হাইকোর্টকে জানানো হবে।
প্রতিবেদনটিতে দুদক বলছে, তারা (দুদক) বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং অডিট ফার্মগুলোর সংশ্লিষ্টতাও খতিয়ে দেখছে। যদি কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর নামে পৃথকভাবে সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তবে সাবেক তথ্য সচিব মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ বা মামলা অনুসন্ধানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
দুদক বলছে, আইএলএফএসএল-এর কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্যদের জামানতবিহীন ঋণ মঞ্জুর করে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিভিন্ন কোম্পানির নামে স্থানান্তর ও উত্তোলন করে ১৪শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২২টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ৬টি মামলা রয়েছে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের। এসব মামলার তদন্ত চলছে। এছাড়া আরও ২৭ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ অর্জন বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষে মামলা করা হবে। পাশাপাশি পিকে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার বিচার চলছে।
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের এ পর্যন্ত ১৭৮ ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি, ৪টি ফ্ল্যাট, ২০ হাজার বর্গফুটের একটি ভবন অবরুদ্ধ করেছে দুদক। যার বাজার মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মডেলের ২২টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। আইএলএফএসএল এর অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে মোট ৩৪টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো বর্তমানে বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখা হতে তদন্ত চলছে। এর মধ্যে এসকে সুরের বিরুদ্ধে বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শাখায় প্রাপ্ত একটি অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মান্নানের বিরুদ্ধে ২টি অর্থ আত্মসাতের মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
এর আগে এর আগে গত ১৭ অক্টোবর একটি দৈনিকে ‘৩৭শ কোটি টাকা লুটপাটে দায়ী পাঁচ ডেপুটি গভর্নর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (আইএলএফএসএল) আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পাঁচ ডেপুটি গভর্নরসহ ২৪৯ কর্মকর্তার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিনটি বিভাগের এই কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করেছেন আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং মেজর (অব.) মান্নান। নজিরবিহীন এই অনিয়মের কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির আলাদা তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মোট ১২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দুটি এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিআইএফসি ও আইএলএফএসএল থেকে অবৈধভাবে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে মোট ৩ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএলএফএসএল শুধু ভারতে কারাবন্দি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেই নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আর বিআইএফসি থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে ৬০০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও নিশ্চুপ ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
পরে গত ১৮ অক্টোবর ওই প্রতিবেদনটি আমলে নেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শত শত কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনায় তদন্তে নাম আসা পাঁচ ডেপুটি গভর্নর সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে জানাতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় নিজেদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড জানাতে হাইকোর্টে দাখিলের জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে দুদক।