চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ৫০ কেজির বস্তায় পরিবহন খরচ গড়পড়তায় পাঁচ টাকা বাড়লেও ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি চালের দাম বাড়িয়েছেন ৪-৫ টাকা।
জানা গেছে, ২৫ টন চালবাহী ট্রাকের কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসার খরচ ছিল ১৮ হাজার টাকা। তেলের দাম বাড়ার পর সেই হিসাবে প্রতিকেজি চালে খরচ বেড়েছে ১০ পয়সার মতো। কিন্তু প্রথম দফাতেই চালের দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে গত ৫০ বছরে চালের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ। সার, বীজসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি, কৃষি গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন কর্মসূচিসহ বহুমুখী উদ্যোগের ফলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে লাখ লাখ টন চাল। তারপরও স্থিতিশীল হচ্ছে না চালের বাজার।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত মজুত নীতির কারণেই বাড়ছে দাম। অতিরিক্ত দামে ধান কিনে সেটা মিলে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। সংকট দেখিয়েও বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম।
অপরদিকে আমদানির চালও বাজারে আসেনি। এলসির চাল বাজারে ছাড়ছেন না আমদানিকারকরা। এ সুযোগে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম নিয়ে সুসংবাদ পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকার ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২০ জুলাই বুধবার পর্যন্ত ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সেদিন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে দেশে এসেছে তিন হাজার ৬৫০ টন চাল।
তবে ব্যবসায়িক শর্ত ভেঙে চালের ব্যবসা করছেন কারা, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নামছে সরকার। তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে মজুত করা চাল বা ধান উদ্ধার করে বাজারে ছাড়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা কীসের অনুমতি নিয়ে কীসের ব্যবসা করছেন, তারা মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনের শর্ত ভাঙছেন কিনা সেসবও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দামের ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অবস্থা রোধে প্রধানমন্ত্রী বাজার দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার ৩৬০ টনের। যার মধ্যে আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের।
শুল্ক কমানোর পর এ পর্যন্ত পাঁচ দফায় চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে, প্রথম দফায় গত ৩০ জুন বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার টন চাল আমদানির জন্য ৯৫টি প্রতিষ্ঠান, ৪ জুলাই ২ লাখ ৪৬ হাজার টনের জন্য ১২৫টি প্রতিষ্ঠান, ৭ জুলাই এক লাখ ৮২ হাজার টনের জন্য ৬২টি প্রতিষ্ঠান ও ১৩ জুলাই ৭৩ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৪৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ১৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) আরও ৯০ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির জন্য ৫৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরের ১৭ আগষ্ট থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৪১৫টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তখন চাল আসে ৩ লাখ ৩১ হাজার টন।
এত আমদানির পরও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। মজুত বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলছে। টাস্কফোর্স কখনও মোকামে, কখনও বাজারে হানা দিচ্ছে। করা হচ্ছে জরিমানা। ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত ৬০ জেলায় চলবে এই কার্যক্রম। এ জন্য খাদ্য বিভাগের ৩৫ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ জুলাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, বোরো সংগ্রহের অগ্রগতি মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের জন্য ৩৫ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে পরিদর্শন করবেন ২৯ জন। ছয় জন করবেন মনিটরিং।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংরক্ষিত খাদ্যশস্যের মান, গুদামের ধারণক্ষমতাসহ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনা পালিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করবেন। বেসরকারি পর্যায়ে মজুত পরিস্থিতি, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে এবং বিদ্যমান এসআরওতে উল্লিখিত পরিমাণের অধিক শস্য কেউ মজুত করছে কিনা সেটাও অনুসন্ধান করবেন।
চুক্তিবদ্ধ মিলারদের দ্রুত খাদ্যশস্য সরবরাহের জন্য উৎসাহিত করবেন তারা। জেলা-উপজেলায় সরেজমিন পরিদর্শন করে সুপারিশসহ সাত কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন আপলোড করবেন। তবে প্রতিবেদনে গুদাম ও ভবন সংস্কার সম্পর্কিত কোনও সুপারিশ করা যাবে না বলেও জানানো হয়। ২০২২ মৌসুমের বোরো সংগ্রহের সময়সীমা ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত হওয়ায় এই সময়ের মধ্যে পরিদর্শন শেষ করবেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে বাংলাদেশকে নতুন করে গবেষণা নিয়ে ভাবতে হবে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও জোরালো কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মন্ত্রী।