ওসমানীনগরে জুতা পায়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শোক দিবস নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

13

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে  :
জাতীয় শোক দিবস পালনকে ঘিরে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করেছে। জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার কথা থাকলেও উপজেলা প্রশাসনের একাধিক দপ্তরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়নি। দায়সারা ভাবেই শোক দিবস পালনের অভিযোগ উঠেছে ক্ষোদ উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে জুতা পায়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতারা। এই নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে সমালোচনা।
জানা গেছে, ১৫ আগষ্ট শোক দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচী গ্রহন করা হয়। সোমবার সকাল ১০ টা থেকে উপজেলা প্রশাসনের ভবন সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণের এক পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাইস্তা মিয়া ম্যুরালের বেদিতে জুতা রেখে ও উপজেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি মানিক মিয়া জুতা পরেই পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জুতা পায়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা জুড়ে সামালোচনার সৃষ্টি হয়। জাতীয় শোক দিবস পালনে প্রশাসনের অনুষ্ঠানে এতবড় ভুল ভাবিয়ে তুলছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের। অনেকেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমরা হৃদয়ে লালন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। বিএনপি জামাতের বেইমানরা এখন আওয়ামী লীগের ছত্র ছায়ায় থেকে নিজেদের আওয়ামী লীগ দাবি করলেও তাদের ভিতরে যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নেই তাই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। জুতা পায়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন অপরাধের সামিল।
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাইস্তা মিয়া বলেন, এমনটি হয়ে থাকলে আমার খেয়াল ছিলো না।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি মানিক মিয়া বলেন, এটা ভুলবশত ঘটে গেছে। অনাকাক্সিক্ষত ভুলের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, আমরা সবাইকে বলেছি জুতা খুলে বেদিতে উঠতে।
এদিকে, শোক দিবসের কোন কর্মসূচীতেই উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নূল হক চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান গয়াছ মিয়া, ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুছলিমা আক্তার অংশ গ্রহণ না করায় দুপুর ১১টার উপজেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে শোক দিবসের সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
এ সময় বক্তারা বলেন, সরকারের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও শোক দিবস ও জাতীয় বিভিন্ন দিবসসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নে নিজেদের আড়াল করে বিরোধীদলীয় পরিচয় দেন তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নূল হক চৌধুরী বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আসতে পারিনি।
অন্যদিকে, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসে উপজেলা যুবলীগের দায়িত্বশীল কাউকে দাওয়াত না দেয়ায় যুবলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানস্থলে গেলেও কোন কর্মসূচীতেই অংশগ্রহণ না করে চলে আসেন তারা।
এই বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক আলতাফুর রহমান সোহেল বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সম্বনয়হীনতায় সরকারী অনুষ্ঠানে উপজেলা যুবলীগের কাউকে দাওয়াত দেয়া হয় না। এমপি থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান বিরোধীদলীয় থাকায় উপজেলা প্রশাসন তাদের সকল সুবিধা দিয়ে নিজেদের ইচ্ছা মতো প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা রায়হানা বলেন, কোন দপ্তর যদি পতাকা অর্ধনমিত না রাখে তাহলে সেটা ভুল হয়েছে। যুবলীগের দায়িত্বশীলদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে তিনি বলেন, জুতা পায়ে শ্রদ্ধা নিবেদন কোন ভাবেই উচিৎ নয়।