মানবপাচার রোধে সর্বোচ্চ আইন

20

বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। আর এই সুযোগই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি মানব পাচারকারী চক্র। তারা উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ।
পাচারের শিকার ব্যক্তিদের বিদেশে গিয়ে যৌন নিপীড়ন, দাসত্ব বরণসহ নানা রকম অমানবিক পেশায় নিয়োজিত হতে হচ্ছে। অনেকের মৃত্যুও হয়। আবার অনেককে জিম্মি বানিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনাও ঘটে। এসব প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের যেমন আইনি ব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে, তেমনি আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর বড় ধরনের নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
গত মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ২০২২ সালের মানবপাচারবিরোধী (টিআইপি) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার মানবপাচার ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দেশটির মানবপাচার নির্মূল প্রচেষ্টা ন্যূনতম মানও পূরণ করতে পারেনি।
মানবপাচার মামলার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ সদর দপ্তরের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা। মন্ত্রণালয়ে দেওয়া সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৭১১টি মামলা তদন্তাধীন। আর দেশের বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন পাঁচ হাজার ২৯টি মামলা। চলতি বছরের পাঁচ মাসে একটি মানবপাচার মামলায়ও বিচার নিষ্পত্তি হয়নি।
যারা গ্রেফতার হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই দালাল ও প্রধান আসামিদের আত্মীয়-স্বজন। বিদেশে থাকা পাচারকারীদের গ্রেফতারে নেই তেমন উদ্যোগ। এ ছাড়া প্রভাবশালী আসামিদের ভয়ে মামলায় সমঝোতা করছে ভুক্তভোগীরা। সাক্ষীরাও আদালতে হাজির হতে চায় না। আবার অপরাধীরা ক্ষমতা ও টাকায় শক্তিশালী। তাদের প্রভাবের কারণে ভুক্তভোগীরা অসহায় হয়ে পড়ে। ২০১২ সালের ‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে’ সংঘবদ্ধভাবে মানবপাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদণ্ড এবং অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান আছে। আইনে আলাদা করে বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান থাকলেও আট বছর পর ২০২০ সালে তা গঠন করা হয়।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির এক হিসাব মতে, প্রায় ১৪ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। বাকি প্রায় ৮৬ শতাংশ বিচারে আসামি খালাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ মানবপাচারের বড় উৎস হয়ে উঠুক, এটা আমাদের কাম্য নয়। দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা পাচারকারীদের সব নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই সব দুর্বলতা দূর করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এই জঘন্য অপরাধের অবসান হোক।