ডাকাতি-ছিনতাই রোধ করুন

4

সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কথায় কথায় খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। ছিনতাই-রাহাজানি নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং, মাদকসেবী, সন্ত্রাসীদের উৎপাতে মানুষ তটস্থ থাকছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কুমিল্লার চান্দিনায় ডাকাতের উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ। সড়ক, মহাসড়ক ও ঘরবাড়িতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাকাতি। গত এক মাসে চান্দিনায় অন্তত ১৪টি বাড়িতে ডাকাতির পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে ১০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি রোধে বিভিন্ন এলাকায় মানুষ রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। অন্য এক খবরে প্রকাশ, কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর হাওরাঞ্চলে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ট্রলারে উপর্যুপরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। নৌযান মালিক, আক্রান্ত যাত্রী, পুলিশ ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে শুধু কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওর ও নদীতে কমপক্ষে ১০টি লঞ্চ ও ট্রলারে ডাকাতি এবং ডাকাতিচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা বন্যা উপদ্রুপ এলাকা থেকে মানুষের গবাদি পশু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে রাত জেগে পাহারা দেওয়াসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অন্য একটি খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গার গহেরপুর-সরাবাড়িয়া সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতরা বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। এমন ঘটনা সারা দেশেই ঘটছে। প্রতিদিনই পত্রপত্রিকায় এমন অনেক খবর থাকছে।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম হচ্ছে নিরাপদে ও মানসম্মান নিয়ে বসবাস করা। আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের সেই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু সারা দেশে যেভাবে ডাকাতি-ছিনতাই-রাহাজানি বাড়ছে, তাতে মানুষের সেই নিরাপত্তা কোথায়? আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাই দেশে সংঘবদ্ধ অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ। মাদকের বিস্তার বখে যাওয়া তরুণের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিশোররাও যুক্ত হচ্ছে এই দলে। বাড়ছে কিশোরদের মধ্যে খুনাখুনির ঘটনা। গতকাল প্রকাশিত অন্য এক খবরে দেখা যায়, গত দেড় বছরে ঢাকায় ৩৩ এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ কিশোর খুন হয়েছে। আর এসব খুনের সঙ্গেও মূলত জড়িত কিশোর ও উঠতি বয়সের তরুণরা। সংঘবদ্ধ বিভিন্ন অপরাধীচক্র সহজেই তাদের দলে টেনে নিচ্ছে। গড়ে উঠছে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, রাহাজানিসহ নানা রকম অপরাধভিত্তিক দল। এদের সংখ্যা ও তৎপরতা যত বাড়ছে, মানুষের নিরাপত্তাবোধ ততটাই কমছে। এই অবস্থা চলতে পারে না, চলতে দেওয়া উচিত নয়।
সামনে পবিত্র ঈদুল আযহা। লাখ লাখ মানুষ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাবে। তাদের নিরাপত্তা কে দেবে? সারা দেশে পশুর হাটগুলো জমে উঠবে। বিপণিবিতানগুলোও জমজমাট থাকবে। আর এই সুযোগে ছিনতাই-ডাকাতির পাশাপাশি অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, জাল টাকার কারবারিরা তৎপর হয়ে উঠবে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশি তৎপরতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে।