চা সিন্ডিকেট

15

সিন্ডিকেটে অস্থির তেলের বাজার নিয়ে তোলপাড় চলছে সারাদেশে। এর মধ্যে সংবাদ এসেছে কাঁচা চা-পাতার বাজারেও সিন্ডিকেট। দেশের উত্তরাঞ্চলে কাঁচা চা-পাতা আহরণের ভরা মৌসুমে সিন্ডিকেট করে প্রক্রিয়াজাত কারখানার মালিকরা দাম কমিয়ে দিয়েছে। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চা-চাষীরা। মৌসুমের শুরুতে কাঁচা চা-পাতার দাম অর্ধেকে নেমে আসায় বিক্ষুব্ধ চাষীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার সমতল ভূমিতে চায়ের সবুজ পাতার বিপ্লব ঘটেছে গত কয়েক বছরে। দুই দশক আগে পঞ্চগড় সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেছিলেন, পাশে দার্জিলিংয়ের চায়ের বিশ^জুড়ে সুনাম থাকলে বাংলাদেশেও কেন হবে না? এরপর সরকারী উৎসাহে কৃষকরা চা চাষ শুরু করেন। বদলে যায় উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার দৃশ্যপট। উন্নতমানের চা উৎপাদনের কারণে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলো উত্তরাঞ্চলে কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত হয়। গড়ে ওঠে কাঁচা চায়ের বাজার। উত্তরাঞ্চলে ২২টি কারখানা কাঁচা চা প্রক্রিয়াজাত করছে। কোম্পানিগুলো বাজার থেকে কৃষকের উৎপাদিত কাঁচা চা কিনে প্রক্রিয়াজাত করে চট্টগ্রামে বিক্রি করছে নিলাম বাজারে।
গত দুই বছর করোনার কারণে কৃষকের দিন ভাল কাটেনি। ধারণা করা হয়েছিল এবার তারা উৎপাদিত কাঁচা চায়ের ভাল দাম পাবেন। এর মধ্যে কৌশলে কৃষকদের বঞ্চিত করা শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলো। তারা বলছেন, নিলাম বাজারে উত্তরাঞ্চলের চায়ের দাম কম। তাই তারা বেশি দামে কাঁচা চা কিনতে পারছেন না। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এটি কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেট পরিকল্পনা। তারা উত্তরাঞ্চলের ভাল মানের চা কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। নিম্ন মানের চা নিয়ে যাচ্ছে নিলামে। এ কারণে চায়ের দাম পাওয়া যায় না। ফলে সরকারেরও ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। কোম্পানিগুলো আরও একটি কৌশলে কৃষকদের বঞ্চিত করছে। দুপুর একটার পর আর কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচা চা কেনা হয় না। ফলে, কৃষকরা বাগান থেকে চা উঠিয়ে বিপাকে পড়ছেন। এই সুযোগে কোম্পানিগুলোর মনোনীত দালালরা অর্ধেক দামে কাঁচা চা বিক্রি করতে কৃষকদের বাধ্য করছে। শুধু তাই নয়, কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচা চা কেনা হচ্ছে ২৫/৩০ ভাগ ওজন কর্তন করে। সিন্ডিকেট কার্যক্রমে সকল কোম্পানি একজোট। স্বাভাবিকভাবে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচও ওঠাতে পারছেন না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে স্থানীয় কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোম্পানিগুলোকে চা কিনতে বাধ্য করার কথা বলছেন। তাদের দাবি, বন্ধ করতে হবে অবৈধ পথে কালোবাজারে প্রক্রিয়াজাত করা চা বিক্রি। কঠোর নজরদারিতে আনতে হবে চায়ের বাজার। নিলাম বাজার স্থাপন করতে হবে উত্তরাঞ্চলে। তা না হলে বন্ধ হয়ে যাবে উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় চা শিল্প।