হাওরের ফসল নিয়ে শঙ্কা, কৃষকের ঘুম হারাম ॥ পাহাড়ী ঢলে তিন জেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান তলিয়ে গেছে ॥ বাঁধ রক্ষায় প্রশাসনের সামাজিক উদ্যোগ ॥ একমাত্র ফসল রক্ষায় মরিয়া হাওরবাসী

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হাওরের ফসল নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে টানা ঢলে ইতোমধ্যে তিন জেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের ধনু নদীর পানি আর পাঁচ সেন্টিমিটার বাড়লেই বিপদসীমা ছাড়াবে। এতে তলিয়ে যাওয়ার হুমকিতে পড়বে তিন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধান। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, উজানে ভারি বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি সঙ্কটজনক আকার ধারণ করতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওরে বাঁধের নিচে ফাটল ধরে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে হুমকিতে পড়েছে ২৫ হাজার হেক্টর বোরো ধান। পানি আটকাতে হাওরে স্বেচ্ছায় ২শ’ শতাধিক কৃষক কাজ করছেন।
পাহাড়ী ঢল থেকে ফসল বাঁচাতে সারারাত শত শত কৃষক বাঁধের ওপর পাহারা দিচ্ছেন। সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন হাওড়ে যাতে পানি ঢুকতে না পারে। সকালে বাঁধের নিচে ফাটল ধরে হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ২০০ কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে হাওরে পানি ঢোকা বন্ধ করেছেন। কৃষকরা জানান, হাওরের বাঁধগুলো খুব ঝুঁকির মধ্যে আছে। যদি হাওর তলিয়ে যায় তাহলে হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহের কোন পথ থাকবে না।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলছেন, এ বছর ৫৩০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের একার পক্ষে এই বাঁধ টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন বিষয়। সেজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে মানুষকে সচেতন করার জন্য এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সকল মসজিদের ইমামদের বলা হয়েছে তারা যেন মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করেন।
বাঁধ রক্ষায় জনগণকে তদারকির অনুরোধ জানাচ্ছেন জেলা প্রশাসকরা। পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে জরুরী বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। তাতে স্থানীয়দের প্রতি ফসলরক্ষা বাঁধ তদারকির অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পাহাড়ী ঢলের কারণে সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাওরের বোরো ফসল রক্ষাবাঁধ আগামী ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে পাটলাই নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জের ১৪৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এতে ৮০০ কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সদর উপজেলার রংগারচর ও সুরমা ইউনিয়নে ছোট কানলার হাওরের পানি উপচে ৫০ হেক্টর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশার টাঙ্গুয়ার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ৬৫ হেক্টর, ছাতক উপজেলার ইসলামপুরের গোয়াবাগুড়া চরমহল্লা ইউনিয়নের গজ্জার হাওরের পানি উপচে ৩০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। তবে স্থানীয় কৃষকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, এসব উপজেলার অন্তত ২০০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৮০০ কৃষক। দ্বিতীয় দফায় ৪ এপ্রিল বিকেল থেকে পানি বেড়ে ফসলি জমিতে প্রবেশ করছে। দাঁড়াইন নদীর পানি ৪ এপ্রিল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে জেলার শাল্লা উপজেলার বাঘার হাওরে ঢুকে কয়েক হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। ফলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে এবার সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার দাঁড়াইন নদীর তীর উপচে যে এলাকায় পানি ঢুকে ফসলি জমি ঢুবে গেছে সেই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন বাঁধ নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি বাঁধের বাইরের অংশের জমি। এখানে কোন বাঁধ নেই, দেয়া হয় না। নদীতীর সংলগ্ন এলাকা। এখানে কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে জমিতে চাষবাস করেন। এই এলাকায় শতাধিক কৃষকের এক-দেড়শ’ বিঘা জমি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত, ‘খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর বিপদসীমা ৪ দশমিক ১৫ মিটার। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মেপে দেখা গেছে, পানি ৪ দশমিক ১০ মিটারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ আর ৫ সেন্টিমিটার বাড়লেই বিপদসীমা পার করবে। তিনি জানান, রবি ও সোমবার ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চেরাপুঞ্জিতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে নেমে খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদে পানি বাড়ছে।
খালিয়াজুরী উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ জানান, খালিয়াজুরী উপজেলার সব বোরো জমি ধনু নদীর পাড়ে। কিছু ফসল রক্ষা বাঁধের মাধ্যমে এখানকার ফসল রক্ষা করা হয়। তবে ধনু নদীর পানি বাড়লে ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর চাপ পড়বে। এতে বাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। এরই মধ্যে খালিয়াজুরীর কীর্তনখোলা বাঁধ ভাঙ্গনের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ধনু নদী উপচে পড়লে পানি ক্রমশ নিম্নাঞ্চলের দিকে ছড়িয়ে পড়বে। এতে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ, সুনামগঞ্জের শাল্লা, কিশোরগঞ্জের ইটনা ও মিঠামইনসহ হাওরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল হুমকিতে পড়বে।
গত কয়েকদিন মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সুরমা ও ধনু নদীতে পানি বেড়ে গেছে। উজানের পানির চাপে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের নজরখালী বাঁধ ভেঙে শনিবার সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে। ফাটল দেখা দিয়েছে আরও কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধে। এসব কারণে হাওর এলাকার কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে।
দেশের সাতটি জেলা পড়েছে হাওর অঞ্চলে। এগুলো হলো- কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। হাওর এলাকার একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ফসল। এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাদ্য নির্ভর করে এ বোরো ফসলের ওপর। হাওর অঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়ে থাকে। আর চাল আকারে প্রায় ২০ লাখ টন বোরো উৎপাদন হয়ে থাকে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সর্বশেষ ২০১৭ সালে হাওর এলাকার ফসলহানি হয়েছিল। ওই বছর আগাম বন্যার কারণে কোন ফসলই ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক। ফলে ওই বছর হাওরের ওই খাদ্য ঘাটতি দেশের মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়েছিল। ওই বছর দেশে ৪০ লাখ টন চাল আমদানি করেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘হাওরের কিছু এলাকায় আগাম জাতের ধান (ব্রি-২৮) কিছুটা কাটা শুরু হয়েছে। তবে হাওরের বোরোর ফসল পুরোপুরি কাটা শুরু হতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু তার আগেই এবছর পাহাড়ী ঢল আসা শুরু হয়েছে। এখন প্রার্থনা একটাই আর যেন বৃষ্টি না হয়।
আতঙ্কে কৃষক : পাহাড়ী ঢল আসতে শুরু করায় কৃষক অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় হাওরাঞ্চলের বোরো চাষীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে কাঁচা ধান কাটছেন কৃষকরা। অনেকে পানিতে ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কেটে কিছু পরিমাণ হলেও ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে ধনু নদের পানি আরও বেড়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ক্রমেই পানি বাড়ছে। ধনু নদের পানি বাড়তে দেখে নিম্নাঞ্চলের হাওরগুলোতে কাঁচা ধান কাটতে শুরু করেছেন চাষীরা।
খালিয়াজুরী সদরের পুরানহাটি গ্রামের সুজন মিয়া ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই জমিগুলোর ধান পাকতে আরও ১০-১৫ দিন দরকার ছিল। তারপরও কাঁচা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছি। অন্তত গরুর খাবারের তো ব্যবস্থা করা যাবে।’
বাঁধ নির্মাণে অগ্রগতি : সিলেট অঞ্চলে মার্চ থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে বৃষ্টি হয় বেশি। সে সময় পাহাড় থেকে ঢল এসে নামে হাওর এলাকায়। এতে মার্চ এপ্রিলে দেখা দেয় আগাম বন্যা। প্রতি বছরই আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় হাওরে নির্মাণ করা হয় বাঁধ। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। বোর্ড আগে ঠিকাদারদের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করত। তবে ২০১৭ সালের ফসলহানির পর সমালোচনার মুখে এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়।
২০১৮ সাল থেকে স্থানীয় উপকারভোগীদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাঁধের জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা পাউবো কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয় আলাদা আলাদা পিআইসি। তবে নির্মাণকাজে পরিবর্তন আনা হলেও বন্ধ হয়নি অনিয়মের অভিযোগ। এ কারণে বাঁধের ওপর আস্থা নেই কৃষকদের।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় এই বাঁধের কাজ। প্রতি বছরই এই বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এবারও একই অভিযোগ তাদের। নির্ধারিত সময়ে এবারও বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় ধান নিয়ে শঙ্কিত হাওর পাড়ের কৃষকরা।
হাওর নিয়ে কাজ করা করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’। তাদের হিসাবে, বাঁধের কাজ বাকি ৩৮ শতাংশ। পাউবোর দাবি, কাজ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা জানান, হাওরের পানি দেরিতে নামা, কয়েক দফা বৃষ্টি, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, এক্সকেভ্যাটরের অপ্রতুলতাসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করা যায়নি।
কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৭২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৫৩২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৪ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, সবশেষ ২০১৭ সালে অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যায় হাওরের বিস্তীর্ণ বোরো ফসল। সরকারী হিসাবে, বাঁধ ভেঙ্গে ১৫৪ হাওরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল।
সে বছর ফসলহানির পরপর বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাঁধের কাজ করানো হয়। পিআইসিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা, কৃষকসহ স্থানীয় উপকারভোগীরাও রয়েছেন। এরপরও বাঁধ নিয়ে অভিযোগ ফুরায়নি।
জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের ৬ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি ছাদিকুর রহমান জানান, পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ করানোয় কিছু বিপত্তি দেখা গেছে। বাঁধের কাজের জন্য প্রথমে পিআইসিকে বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা মিলে কাজের শেষে, কিন্তু পিআইসির সদস্যদের বেশিরভাগ স্থানীয় কৃষক। নিজের পকেট থেকে বাঁধের জন্য টাকা খরচের সঙ্গতি নেই বেশিরভাগেরই। এসব কারণে কাজে দেখা দেয় ধীরগতি।
বাঁধ নির্মাণ কাজ নিয়ে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় সম্প্রতি জরিপ চালায় পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার তত্ত্বাবধানে চালানো এই জরিপের ফলে জানা যায়, নির্ধারিত সময়সীমা শেষে মাত্র ৬৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
জরিপে দেখা যায়, এ পর্যন্ত অনেক বাঁধে মাটির কাজ শেষ হয়নি। মাটি দুরমুজ (কম্পেকশন) ও ঘাস লাগানো হয়েছে আরও কম সংখ্যক বাঁধে। এছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার দূর থেকে বাঁধের মাটি আনার কথা থাকলেও ৩৫ ভাগ ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।’
হাওরের পানি দেরিতে নামা, ইউপি নির্বাচনসহ নানা কারণে নির্ধরিত সময়ে বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শামসুদ্দোহা। তিনি বলেন, ‘এখন আর কোন কাজ বাকি নেই। ঢলে কিছু বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এগুলো আমরা মেরামত করে দিচ্ছি। কোন পিআইসির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বাঁধের কাজ সব শেষ। তবে যে বাঁধগুলো ত্রুটিপূর্ণ এবং সংস্কারের প্রয়োজন সেগুলোর কাজ করা হচ্ছে। আমরা চাই না সুনামগঞ্জে আর একটি ফসলও নষ্ট হোক। সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
ফসল রক্ষায় উদ্যোগ চান জাপা এমপি : জাতীয় সংসদে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে হাওরের বোরো ফসল নষ্টের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। এজন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্টদের বোরো ফসল না তোলা পর্যন্ত বাঁধ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তুলেছেন।