আইসিজে রায়ের অপেক্ষায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজের (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) দিকে। বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী মিয়ানমারে বসবাসরত, বাংলাদেশে আশ্রিত এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিভিন্নভাবে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বর্তমানে বিশ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত অবস্থায় রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ। মিয়ানমারে রয়েছে ৬ লাখ। অবশিষ্টরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এদের সকলের মাঝে অপেক্ষা করছে অধীর আগ্রহ। কী হচ্ছে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলা নিয়ে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা সে দেশের সেনাবাহিনী সংঘটিত করেছে তা নিয়ে আফ্রিকার ছোট দেশ গাম্বিয়া জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছে। এ আদালত নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত। ইতোমধ্যে এ মামলা নিয়ে চারদিনের শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। মূলত গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে গাম্বিয়ার এ মামলা আন্তর্জাতিক এ আদালতে চলবে কিনা তাই প্রতিপাদ্য। গত ২১, ২৩, ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের পক্ষে যুক্তিতর্ক গ্রহণ করেছে আইসিজে।
২৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে গাম্বিয়ার পক্ষের আইনজীবী পল রেইখলার। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, মামলাটি রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে মিয়ানমার পক্ষ কখনও রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেনি। রেইখলার আদালতে বলেছেন, মিয়ানমার যে তার রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্বীকার করতে চাচ্ছে এটাই তার প্রমাণ। গাম্বিয়ার পক্ষের এ আইনজীবী বলেছেন, গাম্বিয়া তৃতীয় পক্ষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত নয়, এসব যুক্তি আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য। মিয়ানমার গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক সনদে স্বাক্ষর করেছে। সেই সনদ মিয়ানমারসহ স্বাক্ষরকারী সব দেশ মানতে বাধ্য। সনদের সদস্য হয়ে সেই সনদ নিজের পাশাপাশি অন্য সদস্যদেরও মেনে চলার ব্যাপারে যে কোন সদস্য রাষ্ট্র আইনী ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রাখে। মিয়ানমার সনদ মেনে চলার দায়বদ্ধতা এড়াতে পারে না।
উল্লেখ্য, গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক সনদ লঙ্ঘন ও রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালে গাম্বিয়া জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ আদালতে মামলা দায়ের করে। গাম্বিয়ার এ মামলার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার। ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে আইসিজেতে শুনানি শুরু হয়। শুনানির শেষদিনে সোমবার গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী এবং মামলায় গাম্বিয়ার পক্ষের এজেন্ট দাউদা অ্যা. জালো মিয়ানমারের আপত্তি নাকচ করার আবেদন জানান। শুনানি শেষে আদালত বলেছেন, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উভয়পক্ষকে রায়ের বিষয়টি অবহিত করা হবে।
এদিকে, বাংলাদেশে আশ্রিত, মিয়ানমারে অবস্থানরত এবং বিশে^র বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা মুখিয়ে রয়েছেন আন্তর্জাতিক এ আদালতের দিকে। কেননা, মিয়ানমারের মিথ্যাচারের বিপরীতে আদালত গাম্বিয়ার যুক্তিতর্ক গ্রহণ করে রায় প্রদান করলে মূল মামলা এগিয়ে যাবে। যে কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে গাম্বিয়া নামটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।