বদলে যাচ্ছে শিক্ষাক্রম

7

বর্তমানে দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত পাঠ্যক্রম বদলে যাচ্ছে ২০২৪ সাল থেকে। গত শনিবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নতুন কারিকুলামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। ২০২৩ সালে প্রাথমিকভাবে এটি বাস্তবায়ন করা হবে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে দেশের নির্বাচিত ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পাইলট প্রকল্প হিসাবে তা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। এরজন্য শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণসহ হাতে-কলমে শেখার জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপনে সহায়তা দেয়া হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এটি সফল হলে পরে তা বাস্তবায়ন করা হবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী ৯ম শ্রেণীতে আর্টস, কমার্স ও সায়েন্স বিভাগ থাকবে না। দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন দশটি বিষয় পড়তে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তিসহ যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণে সক্ষম হতে পারে। জোর দেয়া হবে কারিগরি শিক্ষার ওপর, শিক্ষার্থীরা যাতে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে দুই দিন। ছুটি বাড়লেও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমের কোন ক্ষতি হবে না। তাতে তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ কমবে। শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে যাতে গড়ে উঠতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর দেয়া হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণীতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বদলে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমও।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার জন্য দেশে দক্ষ ও যোগ্য জনসম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চশিক্ষাকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রথম শিল্পবিপ্লবে স্টিমইঞ্জিন, দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবে বিদ্যুত, তৃতীয় শিল্পবিপ্লবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এবং চর্তুর্থ শিল্পবিপ্লব এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে। সেই পেক্ষাপটে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা তথা চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের দেশেও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির বিকল্প নেই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে প্রচলিত উচ্চশিক্ষার সিলেবাস ও কারিকুলাম অনুরূপ দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত ও অনুকূল নয়। সে জন্য উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল সংস্কার ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনে ঢেলে সাজাতে হবে। এর জন্য যথাযথ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও সুপারিশ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের। প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ব্লেন্ডেড লার্র্নিং, ই-লার্নিংসহ নিয়মিত গবেষণা এবং কারিগরি শিক্ষার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে। দেশে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে এক নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। চলতি বছর এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই অবস্থায় উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রম আমূল সংস্কার করে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়।