আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি/ ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া এ ফেব্রুয়ারি …। বছর পেরিয়ে আবার ফিরে এসেছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এ মাসেই মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন ভাষাশহীদেরা। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় অমূল্য প্রাণ সঁপে দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর, বরকতসহ নাম না জানা শহীদেরা। তাদের প্রাণের বিনিময়েই চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছিল ভাষা আন্দোলন। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি সৃষ্টি করেছিল মায়ের ভাষায় কথা বলার নতুন ইতিহাস। ইতিহাসের বাক ফেরানো সেই রক্তঝরা পথরেখাতেই একে একে এসেছে ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বিজয় অর্জন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা। এমনকি নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে ভাষার সংগ্রাম। সেই সুবাদে আজও বাঙালির অস্তিত্বের সঙ্কটে-সংগ্রামে আলোকরেখা হয়ে সামনে আসে একুশে ফেব্রুয়ারি।
ফেব্রুয়ারি মানেই অঙ্গীকারের মাস, প্রত্যয়বদ্ধ হবার মাস। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমাজে, রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শপথ নেয়ার মাস ফেব্রুয়ারি। তবে আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পেরুলেও অফিস-আদালত, শিক্ষাক্ষেত্র, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডসহ সর্বস্তরে বাংলাকে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াসটি পূরণ হয়নি। রয়ে গেছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠার আক্ষেপ। তাই এবারও থাকছে যাপিত জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার সেই অঙ্গীকার।
প্রতিবছরই ভাষার মাসকে ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। তেমনই এক আয়োজন বাঙালীর মননগত উৎকর্ষের প্রতীক অমর একুশে বইমেলা। তবে গত বছরের মতো এ বছরও মহামারীর আগ্রাসনে অনিশ্চয়তার ছায়া পড়েছে বইমেলার শরীরে। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে এই মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনাজনিত কারণে দুই সপ্তাহ স্থগিত রাখা হয়। সংক্রমণের উর্ধমুখী ধারায় বইমেলা শুরুর বিষয়টি এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত।
মূলত বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির সূচনাটা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। সাতচল্লিশের ১৭ মে হায়দরাবাদে এক উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু’। তার সঙ্গে সুর মেলান আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন। প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আজাদ’ পত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যায়।
এই পরিপেক্ষিতে পাকিস্তান গঠনের পরে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। ওই বছরের ২৭ নবেম্বর করাচীতে পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তান গণপরিষদের কাছে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও প্রাদেশিক সরকারের কাজ চালাবার মাধ্যমরূপে মেনে নেয়ার সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে সমগ্র পাকিস্তানে প্রাথমিক শিক্ষায় উর্দুকে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন তমদ্দুন মজলিশের সম্পাদক আবুল কাসেম। বক্তৃতা করেন মুনীর চৌধুরী, আব্দুর রহমান, কল্যাণ দাশগুপ্ত, এ কে এম আহসান, এস আহমদ প্রমুখ। রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলি উত্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমদ।