ফের আন্দোলনে শাবি ছাত্রীরা, ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ

3

স্টাফ রিপোর্টার :
৩ দফা দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রীরা। শনিবার ১৫ জানুয়ারী সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে অবস্থান নেয় শতাধিক ছাত্রী। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।
এদিকে ছাত্রীদের এই অবস্থানে বাধা প্রদান ও হামলা করার অভিযোগ ওঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারী ছাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যায় গোলচত্বরে তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেন। এ সময় ছাত্রলীগের ৩০/৪০ জন নেতাকর্মী এসে গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা ছাত্রীদের হলে ফিরে যাওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদেরর উপর হামলা করে। এতে কয়েকজন আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। তবে বাধা প্রদান বা হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা।
সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগ দেয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলন করছে সিরাজুন্নেছা হলের ছাত্রীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা দাবি পূরণে ২৪ ঘন্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন। ওইদিনই হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। ২৪ ঘন্টার সময়সীমা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে অবস্থান নেন ছাত্রীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারী ছাত্রীরা। এসময় এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের ৩০/৩২ জন নেতাকর্মীও ওই এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন।
আন্দোলনকারী ছাত্রী বলেন, আমাদের দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আজকের মধ্যেই প্রশাসন আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে। তারা যে কোনো সময় হামলা করতে পারে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গত কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমান হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা যৌক্তিক আন্দোলন। ছাত্রলীগ হামলা করবে কেন? তিনি বলেন, ছাত্রীদের আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাসের ভেতরে রোগীবাহি একটি এ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে। এই এম্বুলেন্স যেতে দেওয়া নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে একটু হৈচৈ হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ প্রসঙ্গে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবির বলেন, শুক্রবারই উপাচার্য স্যার ছাত্রীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিনি কিছু সময় চেয়েছেন। এখন তাদের আন্দোলনে নামা অযৌক্তি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে সিরাজুন্নেসা হলের কয়েক শ ছাত্রী প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে উপাচার্য ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলে রাত আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ স্থগিত করে তারা হলে ফেরেন। শুক্রবার দুপুরে আন্দোলনরত ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধিদল উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে ছাত্রীরা ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে বেলা একটার দিকে উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি দাবি করে আবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শুক্রবার বলেন, প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় হলে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ছাত্রীদের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।