ইউপিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান চায় আ’ লীগ

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে আরও কঠোর হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা যাতে না ঘটে তার সঠিক সমাধান বের করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের হাতে অধিক ক্ষমতা পাওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এত বেশী সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের অনেকেই মনে করছেন। এর ফলে এ হতাহতের ঘটনাগুলো সংগঠিত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতাকেও দায়ী করছেন তারা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা বা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে অনেকে এ ধরনের সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে পরার সাহস পাচ্ছে বলেও তারা মনে করেন।
দেশের চার হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে মোট এবার সাত ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ ধাপের নির্বাচন শেষ হয়েছে। আরও দুইটি ধাপ বাকি রয়েছে।
গত বছরের জুন থেকে শুরু হওয়া ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ১১০ জনের ওপরে নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে জানা যায়। এর মধ্যে দুই জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ছয়জন সদস্য প্রার্থীও রয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এবারের ইউপি নির্বাচনে অধিকাংশ ইউনিয়নেই চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে নিজ দলেরই বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর। এর ফলে সহিংসতা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর অধিকাংশই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ঘটছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুরু থেকেই শক্ত অবস্থান নিলে হয়তো অনেক স্থানেই সহিসংতা ও হতাহতের ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো বলে আওয়ামী লীগের ওই নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বাকি দুই ধাপের নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি যারা এ সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ইউপি নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কিছু কঠোর পদক্ষেপের কথা বললেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে পারেনি। বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি হওয়ার কারণে সহিংসতার ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। দলীয় পদক্ষেপগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ ধরনের সহিংসতা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে তার সঠিক সমাধান বের করা জরুরি বলেও তারা মনে করেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে দলীয়ভাবে চিন্তা-ভাবনা করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের ওই নীতি নির্ধারকরা।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সবাই আরও বেশি পেতে চায়। শুধু সম্মানই নয়, অত্যধিক ক্ষমতা পেতে চায়, কেউ কাউকে মেনে নিতে পারছে না, এতে প্রতিহিংসা বেড়ে যাচ্ছে। এখন সুযোগ, সুবিধা বেশি এ কারণে এ সহিংস ঘটনাগুলো ঘটছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে, আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। যাতে কেউ এ ধরনের ঘটনাকে সহজভাবে নিতে না পারে। কঠোরভাবে এদের দমন করতে হবে। যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যেকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর কেউ ঘটাতে না পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ এবং হতাহতের ঘটনাগুলো দুঃখজনক। ইউপির এলাকাগুলো ছোট, তারপর একটি ইউপিতে নয়টি ওয়ার্ড, একটি ওয়ার্ড আরও ছোট। এর মধ্যে প্রার্থী অনেক। এর ফলে প্রতিহিংসা, সহিংসতার ঘটনা ঘটে। শুধু নিহত নয়, কত মানুষ আহত হচ্ছে। কিন্তু যেভাবেই হোক এটা প্রতিহত করতে হবে। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। চিন্তা-ভাবনা করে সঠিক সমাধানটা বের করতে হবে যাতে এ ধরনের ঘটনা আরও না ঘটে।