কৃষি আধুনিকায়ন

613

দেশের বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থার আধুনিক তথা যান্ত্রিকীকরণের জন্য তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। বরং বলা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি আরও একধাপ অগ্রগতি। বর্তমান সরকার দেশের সার্বিক ও সমন্বিত উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে বিশ্বাসী ও আন্তরিক। সে ক্ষেত্রে শুধু নগরায়ণ ও শিল্পায়ন করলেই চলবে না, বরং প্রচলিত ধারার আবহমান কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নও একান্তভাবে কাম্য এবং আকাক্সিক্ষত।
চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও একজন শ্রমিকের মজুরি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। অন্যদিকে বর্তমানে বাজারে এক মণ ধানের দাম ৪৫০-৫০০ টাকা। ইতোমধ্যে ধানের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। সে অবস্থায় কৃষকের মাথায় হাত। অথচ প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ সম্পন্ন হলে ধান বীজ, চারা রোপণসহ সার ও কীটনাশক ছিটানো, নিড়ানি, সর্বোপরি ধান কাটা, মাড়াইসহ শুকানো এমনকি সরাসরি সাইলোতে পাঠানো- সবই করা খুব সহজে সম্ভব আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে। গত কয়েক বছরে দেশে বিপ্লব ঘটে গেছে কৃষিতে। ডিজিটাল কৃষিসহ হাইব্রিড পদ্ধতি চালুর ফলে একেবারে বীজতলা থেকে শুরু করে সার, সেচ, কীটনাশক, আবহাওয়া, জলবায়ু, ফসল উৎপাদন, বাজার পরিস্থিতিসহ অন্যবিধ সমস্যা নিয়ে খোলামেলা মতবিনিময়, পরামর্শ ও প্রতিকারের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে। এর অনিবার্য ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষি ব্যবস্থাপনায়, সুফল পাচ্ছে কৃষক, সর্বোপরি বাড়ছে ফসল উৎপাদন। তার মানে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থা দেশের কৃষিতে প্রায় বিপ্লব নিয়ে এসেছে। আবহমানকাল ধরে প্রচলিত গবাদিপশুচালিত লাঙল-জোয়ালের দিন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। হাইব্রিড বীজ, জিএম বীজসহ আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ফসল, শাকসবজি, মৎস্য, পোল্ট্রি, ফলফলাদির উৎপাদন বাড়িয়েছে বহুগুণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। বগুড়ার সান্তাহারে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম সৌর শক্তিচালিত অত্যাধুনিক বহুতল বিশিষ্ট খাদ্যগুদাম। প্রতিবছর উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক খাদ্যগুদামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। এখন নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। সরকার সম্প্রতি দেশের সব খাদ্যগুদামকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা প্রশংসনীয়। অত্যাধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণের পাশাপাশি প্রয়োজন মানসম্মত খাদ্য সংরক্ষণ, বিপণন ও ব্যবস্থাপনা। তা হলেই বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা।