চতুর্থ ধাপে ৮৪০ ইউপিতে ভোট কাল ॥ সহিংসতার আশঙ্কা, নিরাপত্তা জোরদার করেছে ইসি

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামীকাল রবিবার চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। এ ধাপে সারাদেশের ৮৪০টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ৩৩ ইউপিতে ভোট হবে ইভিএমে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যেই ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শুক্রবার প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারও শেষ হয়েছে। আগের তিন দফার ধারাবাহিকতায় এবারও ভোটের দিন নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কা করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়টি মাথায় রেখে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
এদিকে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে সরকারী দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। স্থানীয় সরকারের একেবারে শেষ স্তরের নির্বাচন হওয়ায় সবাই চায় নিজ এলাকায় তার প্রভাব বিস্তার করতে। আর এ কারণেই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর বিজয়ের জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। এ কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পায় বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।
১০ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৮৪০টি ইউপির নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও পরে এ নির্বাচন ৩দিন পিছিয়ে ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে জানায় ইসি। ২৩ ডিসেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা থাকার কারণে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয় বলে নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ন কবীর খোন্দকার সাংবাদিকদের আগেই জানান।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৫ প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮ প্রার্থী। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৩৫ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
চতুর্থ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৮১৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ হাজার ৫১৩ প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন। চেয়ারম্যান পদে এ ধাপে ১৬টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংখ্যাই বেশি। এর আগে ৩ ধাপে ভোটগ্রহণ শেষ করেছে ইসি। এ ছাড়া পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে ৫ জানুয়ারি। আর ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে ভোট হবে ৩১ জানুয়ারি।
এদিকে চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় ৫৪ ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে শুক্রবার মধ্যরাত (১২টা) থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকবে। নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব মোঃ আতিয়ার রহমান জানান, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা নির্বাচনী এলাকাগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন।
মোঃ আতিয়ার রহমান আরও জানান, শুধু মোটরসাইকেল নয়, এর বাইরে অন্য সব যন্ত্রচালিত যানবাহন শনিবার মধ্যরাত (১২টা) থেকে রবিবার মধ্যরাত (১২টা) পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে। তবে সাংবাদিক, নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ জরুরী সেবার কাজে নিয়োজিতদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
এবারের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ২১৭ জন। তার আগের নির্বাচনগুলোতে এ সংখ্যা আরও অনেক কম। আর এবার ৫ ধাপেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৩৫৪ চেয়ারম্যান। এর মধ্যে ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপি নির্বাচনে ভোটের আগেই চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৮ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য ১১২ জন এবং সাধারণ সদস্য ১৩৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ২৮ নবেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের এক হাজার ৭ ইউপির মধ্যে ১০০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য ১৩২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় র্নির্বাচিত হন। ১১ নবেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩টি ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর আগে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় প্রথম ধাপের নির্বাচন হয়। ২০ জুন অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান, নারী সদস্য পাঁচজন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৯ জন নির্বাচিত হন। আর ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৬১ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান, নারী সদস্য ৭ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় পঞ্চম ধাপের ৭১৪টি ইউপির নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগেই ৫২ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধাপে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য ৩২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের ১০৯ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর ষষ্ঠ ধাপে ২১৯টি ইউপিতে নির্বাচন ৩১ জানুয়ারি হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পার হলে জানা যাবে এ নির্বাচনে কতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।